গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ছুরিকাঘাতে আহত আজেদা বেগম (৩৫) চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে হার মানলেন। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার এমপি পাড়ার ভাড়াবাসায় স্বামী শামীম মিয়ার ছুরিকাঘাতে আজেদা গুরুতর আহত হন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। পরে সেখানে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে বগুড়ায় রেফার করেন।
অভিযুক্ত স্বামী শামীম মিয়া (৪২) গোবিন্দগঞ্জের কামারদহ ইউনিয়নের বেতগারড়া গ্রামের মৃত মাফু মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক।
নিহত আজেদা বেগম উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের রাজা মিয়ার মেয়ে। আট বছর বয়সী ছেলে আতিক এবং ১৬ বছর বয়সী মেয়ে সোনিয়াকে নিয়ে কোনোমতে চলতো আজেদার পরিবারের জীবন।
স্থানীয়রা জানান, অভাবের সংসারে আজেদা অন্যের বাসায় কাজ করতেন। শামীম হোটেলে কাজ করলেও নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্তি ও মোবাইল ফোনে জুয়া খেলায় জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে দাম্পত্য জীবনে প্রায়ই কলহ লেগেই থাকতো। ঘটনার দিনও তাদের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে শামীম ক্ষিপ্ত হয়ে নতুন ধারালো ছুরি দিয়ে আজেদার পেটে আঘাত করেন। এরপর ছেলেকে হত্যা এবং নিজেকেও শেষ করার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যান শামীম।
গুরুতর অবস্থায় আজেদাকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বগুড়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে পরদিন বুধবার তাকে বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু বাড়িতে পেট ফুলে অবস্থার অবনতি হলে আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে রাতেই তার অস্ত্রোপচার করানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘স্বামীর ছুরিকাঘাতে আহত নারীর মৃত্যুর খবর স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, আজেদার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আর্থিক সংকটে চিকিৎসা চালানো কঠিন হয়ে পড়লে স্থানীয় মাকছুদ রহমান নামে এক ফেসবুকে সহায়তার আহ্বান জানান। পরে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়ালে সেই টাকায় অস্ত্রোপচার করা হয় আজেদার।
এ বিষয়ে মাকছুদ রহমান বলেন, ‘চিকিৎসার শুরুতেই হাসপাতালে গিয়ে পরিবারটি দালালচক্রের কাছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা হারিয়েছে। তারপরও স্থানীয় তরুণরা মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াসহ চিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো গেলো না।’
তিনি আরও জানান, বগুড়া থেকে সাজেদার মরদেহ বাড়িতে আনার খরচ বহন করার সামর্থ্যও পরিবারের নেই। তাই ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আবারও সহায়তা চাইলে অনেকেই সাড়া দেন। সেই সহায়তার অর্থে তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্ট দেখে আরও কয়েকজন আজেদার দুই ছেলে-মেয়েকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসছেন।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, গৃহবধূ আজেদার মৃত্যুর জন্য শুধু স্বামীর নিষ্ঠুরতা নয়, দারিদ্র্য, চিকিৎসা ব্যবস্থার জটিলতা ও সামাজিক অবহেলাও সমানভাবে দায়ী। দরিদ্র পরিবারের এই গৃহবধূর এমন মৃত্যুর ঘটনা গোবিন্দগঞ্জে গভীর শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

















