শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রসারের লক্ষ্যে প্রায় এক বছর আগে সম্পন্ন হয়েছে খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ। তবে সরকারি দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এখনও হস্তান্তর হয়নি ১১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই হাসপাতাল। চিকিৎসক, নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগও হয়নি। কবে এ সংকটের সমাধান হবে এবং হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। বটিয়াঘাটার কৃষ্ণনগর ও ডুমুরিয়ার চকমথুরাবাদ মৌজার সংযোগস্থলে কেডিএর ময়ূরী আবাসিক এলাকার বিপরীতে জমি চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন ৫২ কোটি টাকায় ৪ দশমিক ৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে গণপূর্ত বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। গণপূর্ত বিভাগ ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের বেজমেন্ট ও একতলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। টেন্ডারে নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রৈতি এন্টারপ্রাইজ ২০২০ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ পায়। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই কাজের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, সংশোধিত প্রস্তাবনায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবনের দুই থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে রান্নাঘর, সাবস্টেশন, পাম্প হাউজ, সীমানাপ্রাচীর, রাস্তা, ড্রেন ও ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের কাজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুন মাসে।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কোনও কাজই নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয়নি। বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের জুনে কাগজে-কলমে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়। অথচ পাঁচতলা ভবনটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। প্রবেশপথে রয়েছে আরসিসি ঢালাইয়ের রাস্তা। কিন্তু দক্ষিণ দিকে সীমানাপ্রাচীর ও প্রধান ফটকে গেট নেই। ফলে গরু-ছাগল অবাধে চরছে এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণ নোংরা হচ্ছে। রয়েছে চুরি এবং মাদকসেবীদের আড্ডার শঙ্কাও।
জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, “জমি অধিগ্রহণে বিলম্বের কারণে দরপত্র আহ্বানেও দেরি হয়। কাজ শুরুর পর প্রবেশপথ নিয়ে জটিলতায় কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। তবে, ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর নির্মাণ কাজ বুঝে নিতে খুলনা সিভিল সার্জনকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।”
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজা খাতুন বলেন, “কাগজে-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতালের একপাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটকে গেট নেই। ফলে হাসপাতালটি অরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া কার্যক্রম শুরুর জন্য আসবাবপত্র ও জনবলের ব্যবস্থা নেই।”
সীমানাপ্রাচীর ও গেট প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, সমাপ্ত প্রকল্পে পুরো বা সীমানাপ্রাচীর ও মেইন গেটের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ভবনটি ছয়তলা থেকে দশতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ বাকি রাস্তা, সীমানাপ্রাচীর, ড্রেন, মেইন গেট, নার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে ৯৮ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত এসব কাজ সম্পন্ন হবে।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “খুলনা বিভাগে শিশুদের জন্য পৃথক সরকারি হাসপাতাল নেই। তাই এই হাসপাতাল নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক আশা ছিল। এখানে শিশুরা উন্নত চিকিৎসা পাবে।”
হাসপাতালটি দ্রুত চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

















