দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আলোচিত আদিবাসী ঢুডু সরেন হত্যা মামলার রায়ে সব আসামি খালাস পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বজনরা। একইসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের বড় কচুয়া গ্রামের ঢুডু সরেনের ছেলে রবি সরেন। এ সময় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১৪ সালের ২ আগস্ট উপজেলার হিলির ডাঙ্গাবাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে আদিবাসী নেতা ঢুডু সরেনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ছেলে রবি সরেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় স্থানীয় প্রভাবশালী আবদুল গোফফার ও তার পরিবারের আট জনসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় আদিবাসী পরিষদ, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ ,জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম, হিল উইম্যান ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন এক মাস ধরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল। তাদের আন্দোলনের মুখে ওই সময় মামলার প্রধান আসামি আবদুল গোফফারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে রবি সরেন বলেন, ‘উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড় কচুয়া গ্রাম, পরে যা ঢুডুর মোড় নামে খ্যাতি পায়, সেখানে বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সময়ে পত্র-পত্রিকায় হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ হয়েছিল। বহুল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রায় হয়েছে গত ১১ নভেম্বর। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম, হত্যা মামলার সব আসামি বেকসুর খালাস পেলো। এই রায়ের মধ্য দিয়ে শুধু আমার পরিবার নয়, পুরো সাঁওতাল সম্প্রদায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অপরাধীদের আরও বেশি উৎসাহিত করা হলো।’
রবি সরেন জানান, ঢুডু সরেনের পূর্বপুরুষদের মোট সম্পত্তি ৩৩ একর ১১ শতক। এই সম্পত্তি দখলের জন্য ঢুডু সরেনের বাবা ফাগু সরেনকে হত্যা করে সম্পত্তি দখল করে ভূমিদস্যু মহির উদ্দিন, গোলাজার হোসেন, হাজের উদ্দিন সরকার, ওমর আলী, তোফাজ্জল হোসেন ও মোজাম্মেল হক। ২০১১ সালের ২৮ জুলাই ঢুডু সরেনের বড় ভাই গোসাই সরেনকে হত্যা করা হয়েছিল। পরে টাকার অভাবে মামলা চালাতে না পারায় মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। হত্যাকারীরা যথারীতি পার পেয়ে যায়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে ঢুডু সরেনকে হত্যা করে ডা. আবদুল গোফফার, যিনি ফাগু সরেনের হত্যাকারী গোলজার হোসেনের ছেলে।
রবি সরেন বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামি আবদুল গোফফার, আজহার আলী, দেলোয়ার হোসেন, আবদুল আলিম, সুজন আলী, স্বপন আলী ও সুমন ওরফে ছিব্বির আলীকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। কোনও অপরাধের বিচার না হলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয় আর আক্রান্তরা আরও আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে থাকে। নওগাঁর আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যার বিচার হয়নি, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পুলিশের গুলিতে তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার হয়নি। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সাঁওতাল হত্যারও বিচার মেলেনি। আজ যখন এই হত্যাকারীরা খালাস পেলো তখন ঢুডু সরেনের পরিবারের সদস্যরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত আছে। অন্যদিকে ঢুডু সরেনের পৈতৃক সম্পত্তির ৩০ একর ৩৬ শতক যারা দখল করেছে মহির গং তাদের বিরুদ্ধে যে সিভিল মামলা চলছে, সেটা নিয়েও নানা হুমকিতে আছি আমরা। দুই প্রজন্মের হত্যা হয়ে যাওয়া এবং অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে আমাদের। আমরা কী তাহলে বিচার পাবো না।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি শিবানী উড়াও, বাসদের জেলা সমন্বয়ক কিবরিয়া হোসেন, ঢুডু সরেনের ছেলে মিলন সরেন, ভাতিজা সুখলাল সরেন, স্ত্রী ফুলমনি মার্ডি, আত্মীয় মঙ্গল মার্ডি উপস্থিত ছিলেন।

















