প্রশাসন নিয়ে ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য দেওয়ায় চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জামায়াত। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সই করা এ নোটিশ তাকে পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, গত ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ‘নির্বাচনি দায়িত্বশীল সম্মেলনে’ আপনি বক্তব্য দিয়েছেন যে, নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়; যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেফতার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে। আপনার এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। আমরা বক্তব্যটি দেখেছি, যা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পেশাদারত্ব, নিরপেক্ষতা ও মূল স্পিরিটকে স্পষ্টভাবে ব্যাহত করেছে। আমরা মনে করি, প্রশাসন পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন, এখানে আমাদের হস্তক্ষেপের কোনও সুযোগ নেই। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আপনি এই ধরনের সাংগঠনিক ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্নকারী ও শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। যার ফলে আপনাকে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমিরে জামায়াতও আপনাকে ডেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং সতর্ক করেছেন। এরপরও আপনার মধ্যে কোনও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
এতে আরও বলা হয়, এই বক্তব্য প্রকাশের পর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। দেশের কূটনৈতিক মহল থেকেও সরাসরি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশ-বিদেশে আমাদের জনশক্তি এবং সাধারণ জনগণের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই বক্তব্যের কারণে ইতোমধ্যে সংগঠনের ভাবমর্যাদা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা দলীয় গঠনতন্ত্র, নীতি, আদর্শ, শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণের পরিপন্থি। এ কারণে আমিরে জামায়াতের নির্দেশে আপনাকে এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে যে, কেন আপনার ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না? তার লিখিত জবাব আগামী সাত দিনের মধ্যে দিতে হবে। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এর আগে শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের জিইসি কনভেনশন হলে জামায়াত আয়োজিত ‘নির্বাচনি দায়িত্বশীল সম্মেলনে’ বিশেষ অতিথি হিসেবে শাহজাহান চৌধুরীর দেওয়া একটি বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা ও অস্ত্র ঢুকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সম্মেলনে শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়, যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেফতার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে। যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক, নুরুল আমিন (নগরের সেক্রেটারি) ভাইয়ের ফটিকছড়িতে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম, তা সকালবেলায় জেনে নেবেন আর আপনাকে প্রটোকল দেবেন।’
















