যশোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ম্যুরাল ভেঙে একই জায়গায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। সোমবার (১৪ জুলাই) বেলা ১১টায় যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
যশোরের বকুলতলায় যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ছিল, সেই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
উদ্বোধনকালে জানানো হয়, আগামী ৫ আগস্ট স্মৃতিস্তম্ভটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানে অংশ নেন জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা, নিহত যোদ্ধাদের পরিবার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। শুরুতেই নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বক্তব্য প্রদানকালে জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম বলেন, সারা দেশের মতো যশোরেও জুলাই যোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে রক্তের বিনিময়ে আমরা বহিরাগত শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশের ভেতরের এক ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। রক্তের বিনিময়ে নতুন এক ইতিহাস রচিত হয়েছে। এ স্মৃতিস্তম্ভ আমাদের সেই সাহস, ত্যাগ আর প্রত্যয়ের কথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেবে। অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাসার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবু জাফর সিদ্দিকী, নাগরিক পার্টির নেতা নুরুজ্জামান, জুলাই আন্দোলনে নিহত আব্দুল্লার বাবা আব্দুল জব্বার, জুলাই যোদ্ধা মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, এই স্মৃতিস্তম্ভ শুধু একটি নির্মাণ নয়, বরং এটি যশোরবাসীর আত্মপরিচয়, সাহসিকতা ও সংগ্রামের প্রতীক হয়ে থাকবে। এটি এক মাইলফলক হয়ে আগামী দিনে প্রজন্মকে মুক্তচিন্তা ও প্রতিবাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।
উপস্থিত ছিলেন- প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান, যশোর প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মোহাম্মদ শামস গোলাম হোসেন, কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার নুরশেদ আহমেদ ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র আন্দোলনে ভূমিকা রাখা বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সার্বিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সোহানুর রহমান সোহাগ। অনুষ্ঠানের শেষাংশে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগ। প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত বাজেট ১৪ লাখ টাকা। স্মৃতিস্তম্ভটির উচ্চতা হবে ১৮ ফুট এবং প্রস্থ ৬ ফুট। এর বিভিন্ন অংশে খোদাই করা হবে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনের সময় রাজপথে উচ্চারিত উদ্দীপনামূলক স্লোগানসমূহ।