গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় গোটা জেলায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। জনমনে রয়েছে আতঙ্ক। ঘটনার পরদিন সকাল থেকেই দেখা যায়, জেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। রাস্তায় রিকশা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি। তবে আজ শনিবার (১৯ জুলাই) রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও কাটেনি আতঙ্ক।
এদিকে, শনিবার বিকাল ৫টায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, আজ রাত ৮টা থেকে কারফিউ আগামীকাল রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। আগামীকাল পুনরায় বিবেচনা করে কারফিউ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে মাঝেমধ্যে শিথিল রেখে জেলায় কয়েকদিন ধরে চলছে কারফিউ। আর এ কারণে জনজীবনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না অনেকে। খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। দিন এনে দিন খাওয়া কর্মজীবীরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপদে। একদিকে যেমন কাজ বন্ধ অন্যদিকে বাজার-ঘাট বন্ধ। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে কারফিউ শিথিল করায় মানুষ কিছুটা স্বস্তিবোধ করছেন।
জেলায় চলমান পরিস্থিতিতে কেমন আছেন, জানতে চাইলে অটোরিকশাচালক আজিজুর রহমান পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কেমন আছি বোঝেন না? কয়দিন ঠিকমতো অটো চালাবার পারি না। এ ছাড়া কোনও যাত্রীও নাই। আয় করতে পারি না, সংসার চলে কীভাবে।’
সংঘর্ষের পর থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে কেমন আছেন, জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা দিলীপ বিশ্বাস বলেন, ‘ভালো নাই। শুনছি কারফিউ চলছে। হাটবাজার বন্ধ, মানুষজন আসে না। আমরা তো প্রত্যেকদিন মাছ বেচি, আয় করি খাই। কিন্তু এহন তো সমস্যায় আছি।’
ফল ব্যবসায়ী পলাশ বলেন, ‘হঠাৎ কারফু (কারফিউ) দেওয়াতে বিপদে আছি। অনেক ফল নষ্ট হয়ে গেছে। এহন যা আছে তা-ও কেনার তেমন লোকজন নাই। মানুষ ভয়ে ভয়ে মনে হয় ঘরের তে বাইর হচ্ছে না। কী করবো? তাড়াতাড়ি সবকিছু ঠিক হয়ে যাক, আমরা তাই চাই।’
নাম প্রকাশ না করে একজন শিক্ষক বলেন, ‘ভাই আছি, স্কুলে যাই আর স্কুল শেষে সরাসরি বাসায় ঢুকে পড়ি। কারণ, বিভিন্ন জায়গায় ধরপাকড় হচ্ছে। আমরা নিরীহ মানুষ কোনও ঝুট-ঝামেলায় না পড়ি। সেই জন্য নিরাপদে থাকি আল্লাহ নিরাপদে রাখুক। কারফিউ না থাকুক গোপালগঞ্জে শান্তি ফিরে আসুক আমরা তাই চাই।’
বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর কোটালীপাড়া ও কাশিয়ানী থানায় পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক ৪টি মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এতে প্রায় তিন হাজারের অধিক লোককে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৩০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, আজ শনিবার সকাল থেকে শহরে দোকানপাট তেমন খোলেনি। এ ছাড়া লোকজনেরও তেমন কোনও আনাগোনা নেই বললেই চলে। পুলিশি তৎপরতা রয়েছে চোখে পড়ার মতো। জনমনে রয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক। সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের তৎপরতা বাড়তে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহে।
উল্লেখ্য, সারা দেশে মাসব্যাপী পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে তারা এটিকে ‘লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হিসেবে নামকরণ করেন। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গোপালগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও ছাত্রলীগ (নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীরা এটিকে প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
পরে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে বুধবার সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতাদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।