জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারকে যদি ঠিক করতে চাই সবাইকে সবার জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। আমি যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কক্সবাজার যেটা বলেছেন সেটা আমাদের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের প্রত্যাশা অনুযায়ী ছিল না। কিন্তু গতকালকে বিএনপির মুখপাত্র ইশরাক হোসেন তার বক্তব্যে যেভাবে উলঙ্গ করে কিছু মানুষকে মারার কথা বললেন, খুব নিম্নমানের কিছু শব্দ ব্যবহার করলেন, এটা তো নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর চেয়ে অনেক ডিগ্রি নিচের বক্তব্য। আমরা যদি কারো কাছে ভালো প্রত্যাশা করি আমার তো তার চেয়ে ভালো করতে হবে। কিন্তু আমরা তার চেয়ে খারাপ করে যদি ভালো প্রত্যাশা করি তাহলে তো হবে না।’
তিনি বলেন, ‘ইশরাক ভাইয়ের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে তিনি একেবারেই আবেগের বশবর্তী হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের মধ্যে পলিটিক্যাল ম্যাচিউরিটির কিছুই দেখিনি। আমরা প্রত্যাশা করি, ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াইয়ে যে ইশরাক ভাইকে আমরা দেখেছি ওই ভূমিকায় তিনি যাবেন। এই ধরনের বক্তব্য তার কাছে কখনও প্রত্যাশিত নয়।’
সোমবার (২১ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শুরুর আগে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘এক ঘণ্টায় সরকার পতন ঘটানোসহ যে ধরনের কথাবার্তা তিনি বললেন এগুলো এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে কখনও প্রত্যাশিত নয়। এগুলো আসলে যারা বলেন, তাদের মধ্যে আমরা ফ্যাসিস্টের চরিত্র দেখতে পাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলি, কেউ যদি এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তা বলেন তাহলে আমরাও আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করবো।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রত্যেকটা দল রাজনৈতিক ব্যক্তির মধ্যে রেসপেক্টফুল (সম্মানজনক) সম্পর্ক তৈরি হোক। এ জন্য আমাদের সবার জায়গা থেকে যেটা করা দরকার সেটা করবো। যারা যত বড় দল মনে করে তাদের দায়িত্ব তত বেশি। শুধুমাত্র বললে হবে না, দায়িত্ব নিতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কক্সবাজারে আমাদের মঞ্চে আগুন দেওয়া হয়েছে, ব্যানার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আমাদের একজন জুলাইযোদ্ধা আহত হয়েছেন। তাকে রক্তাক্ত করা হয়েছে।’
সারজিস বলেন, ‘ফেনীতে ছাত্রদলের একজন বক্তব্য দিয়েছেন, ফেনীতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এগুলো আসলে আওয়ামী কালচার ছিল। নতুন কালচার এ যাওয়ার যে আগ্রহ সেটা তাদের মধ্যে দেখি না। নতুন কালচারে যাওয়ার জন্য আমাদের এই ফাইট। যদি প্রয়োজন হয় কেউ আমাদের রক্তাক্ত করবে, করুক। আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু নতুন কালচার স্টাবলিশ করার জন্য আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেবো না।’
আওয়ামী লীগের হরতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা নিষিদ্ধ দল। তাদের হরতাল বাংলাদেশের মানুষ পরোয়া করে না। তারা যেটুকু করছে এটা হচ্ছে তাদের জায়গা থেকে চোরাগোপ্তা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। আমরা বিশ্বাস করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের জায়গা থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
উল্লেখ্য, রবিবার রাজধানীর নয়াবাজারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কটূক্তি, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে মশাল মিছিলপূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির পর নির্বাচন পেছানো হলে আমি বর্তমান সরকারকে এক ঘণ্টা ও ক্ষমতায়ন থাকার অনুমতি দেব না। সরকার যদি নির্দিষ্ট সময়—অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি পর—নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করতে পারে, তবে জনগণের অধিকার খর্ব করছে। নির্বাচন করতেই হবে—নইলে আন্দোলন শুরু হবে। আমরা সরকারের বিদায় চাইলে চলবো, আর তা ‘ঘণ্টাও থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন কোনো নির্বাচনী এলাকা নেই যে, এনসিপির কেউ জয়লাভ করবে। তাই তারা পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন পেছানোর চক্রান্ত করছে। জুলাই শহীদদের আত্মা আজ কষ্ট পাচ্ছে। কারণ, শহীদরা কেউ জানতো না আমাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে কারো মাঝে ক্ষমতার লোভ জাগবে। প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি বাক স্বাধীনতা আছে, তার মানে এই নয় যে আরেকজনের স্বাধীনতা হরণ করবেন, সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করবেন। এনসিপি আজকে যেভাবে শিষ্টাচার বহির্ভূত কথা বলছে, সেটিকে গণতন্ত্র বলে না। কক্সবাজারে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী যে শিষ্টাচার বহির্ভূত কথা বলেছেন, তার জন্য তাকে ক্ষমা চাইতেই হবে। নতুবা চকরিয়ার মতো সারাদেশে জনগণ তাদের অবাঞ্ছিত করবে।’