শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবিতে যশোর শিক্ষাবোর্ড ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।
প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোসাম্মৎ আসমা বেগম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবদুল মতিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি উপস্থাপন করেন। বোর্ডের কর্মকর্তারা আশ্বাস দেন শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। এরপর শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবোর্ড চত্বরে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে মিছিল নিয়ে তারা শিক্ষাবোর্ড থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেন। সেখানে গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে স্লোগান দেন। এরপর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, মাইলস্টোন ট্রাজেডির পর এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষাসচিব ও শিক্ষা উপদেষ্টা গড়িমসি করেছেন। তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তথ্য উপদেষ্টার মাধ্যমে রাত ৩টার সময় পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। আর যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ করেছে সকাল ৮টায়। অনেকেই তা জানতে পারেনি। দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হয়েছে। একই সঙ্গে মাইলস্টোন স্কুলে নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলা এই জঘন্য ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমতা চাইতে হবে। নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো প্লেনগুলো বাতিল করে আধুনিক প্লেন চালু করতে হবে। বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে আরও মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফারহানা হোসেন অরণ্য বলেন, মাইলস্টোনের বিমান দুর্ঘটনায় সারা দেশের মানুষ শোকাহত। কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তথ্য উপদেষ্টা তার বাসায় গিয়ে মিটিং করার পর রাত ৩টায় পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তাহলে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের কাজ কি? তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এ জন্য তাদের দুই জনের পদত্যাগ দাবি করছি। একই সঙ্গে মাইলস্টোনে নিহত ও আহতদের তালিকা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে দাবি জানাচ্ছি।’
আরেক পরীক্ষার্থী মুনজাইরা তাব্বাচ্ছুম জারা বলেন, ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় পুরো দেশ কাঁদছে। আমরা আমাদের ছোট ছোট শিক্ষার্থী ভাইবোন ও স্বজন হারিয়েছি। যেভাবে দগ্ধ হয়ে স্কুল শিক্ষার্থীরা মারা গেছে তা অবর্ণনীয়। ভাবতেই বুকের ভিতর হু হু করে ওঠে। অথচ অথর্ব ও অযোগ্য শিক্ষা উপদেষ্টার সেগুলো চোখে পড়ে না। এ জন্যই তিনি আজকের পরীক্ষা স্থগিত করেননি। যখন এ নিয়ে সারাদেশ সমালোচনায় উত্তাল, তখন তার ঘুম ভেঙেছে। সকালে উঠে আমাদের জানতে হয়েছে পরীক্ষা স্থগিত। অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে নোটিশ দেখে ফিরে এসেছে। এটি কতটা বেহায়াপনা উনি কী জানেন? অভিযোগ করে বলেন, এই অযোগ্য লোককে দিয়ে আমাদের শিক্ষার সংস্কার হবে না। আমরা তার পদত্যাগ চাই। শিক্ষার্থীদের লাশ নিয়ে রাজনীতি চলবে না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোসাম্মৎ আসমা বেগম বলেন, আমরা শিক্ষাবোর্ড থেকে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। আমরা ডিসিকেও জানিয়েছি। আজকের পরীক্ষা স্থগিত হবে। আমাদের চিঠি তৈরি করতে দেরি হয়েছে। আমরা তোমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের হতাহতের ঘটনায় আমরা শোকাহত। ফুলের মতো শিশুরা ঝরে গেলো, জাতির জন্য অনেক ক্ষতির। আপনাদের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আপনাদের দাবির বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।













