সুনামগঞ্জ শহরের একটি ক্লিনিকে ঢুকে চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ছুরিকাঘাতের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাতে ক্লিনিকের পরিচালক রুহুল আমিন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান উদ্দিন ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহনেওয়াজ সৌরভ মুবিনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর মডেল থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রায়হান উদ্দিনের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠনের সব পদ স্থগিত করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন
জানা গেছে গেছে, সুনামগঞ্জ শহরের আনিসা হেলথ কেয়ার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান উদ্দিন তার স্ত্রীকে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইউরিন টেস্টের জন্য নিয়ে যান। তিনি বেশ কিছু সময় আল্ট্রাসনোগ্রাম রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর জন্য। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে রায়হান ও ডাক্তার গোলাম রব্বানী সোহাগের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
এ সময় ডাক্তার বলেন, রুমে আরেকজন রোগীর পরীক্ষা চলছে, আপনি দরজা থেকে সরে দাঁড়ান। এ ঘটনায় তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। পরে ক্লিনিকের লোকজন রায়হান উদ্দিনকে শান্ত করেন। স্ত্রীর শারীরিক পরীক্ষা শেষে তারা স্বামী-স্ত্রী বাসায় চলে যান। বাসায় যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর রায়হান আবারও ডাক্তারের চেম্বারে আসেন। পূর্বের ঘটনার জন্য ডাক্তারকে জোরপূর্বক ‘সরি’ বলতে বলেন। ডাক্তার সরি না বলায় রায়হান ও তার সহযোগী তাকে বেধড়ক মারধর করে মাটিতে ফেলে ছুরিকাঘাত করেন।
একপর্যায়ে ক্লিনিকের লোকজন সোহাগকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে রায়হান উদ্দিন ও তার সঙ্গে থাকা যুবক দ্রুত ক্লিনিক ছেড়ে চলে যান। পরে আহত চিকিৎসক গোলাম রব্বানী সোহাগকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অভিযুক্ত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান উদ্দিন দাবি করেন, মঙ্গলবার বিকালে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য আনিসা হেলথ কেয়ার ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে যাই। সেখানে ডাক্তার লিপিকা দাসের টিকিট সংগ্রহ করি। আল্ট্রাসনোগ্রাম রুমে ডাক্তারের সঙ্গে আমার স্ত্রীর সাথে ডায়াগনসিসের সিরিয়াল নম্বর নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীকে চেয়ার থেকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। ঘটনাটি আমার স্ত্রী আমাকে জানায়। আমি ভেতরে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডাক্তার গোলাম রব্বানী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে চেম্বারের কলম দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি ঘা দিতে শুরু করেন। আমি ডাক্তারের কলমের আঘাত প্রতিহত করার সময় তিনি আহত হন। তাকে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ঘটনাটি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানকে জানানো হলে তাদের নির্দেশে দলের দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে অভিযুক্তের সাংগঠনিক ও প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বেচ্ছাসেবক দল সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক রায়হান উদ্দিনের প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিতের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কারও ব্যক্তিগত অন্যায় আচরণের দায় সংগঠন নেবে না। যে কেউ অন্যায় করলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।