‘থানায় দরবারের কথা কইয়া ওসি স্যার আমার নিরপরাধ ছেলেডারে ডাইক্যা নিয়া জেলে ঢুকাইয়া দিলো। এ সময় ওসি স্যারের হাতে পায়ে ধইরাও কোনও লাভ হইলো না। টেহা আর ক্ষমতার কাছে বিক্রি হইয়া এই কাজ করছে ওসি স্যার। আমার মাস্টার্স পাস ছেলেডা জেল থাইক্যা বাইর হইয়া তো খারাপই হইবো। বাপ মরা ছেলেডারে কষ্ট কইরা পড়াশোনা করাইছি। নিজের টেহায় জমি কিন্না এমন হইবো কোনোদিন ভাবতেও পারি নাই।’
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার সময় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনে চোখের পানি ফেলে এসব কথা বলছিলেন নগরীর বলাশপুর এলাকার বাসিন্দা আনারা বেগম (৬৫)।
জমি নিয়ে কয়েক বছর ধরে আনারা বেগমের সঙ্গে বিরোধ চলছে প্রতিবেশী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান পরিবারের সঙ্গে।
আনারা বেগম বলাশপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী আর মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের উপপ্রধান প্রকৌশলী।
সাংবাদিক সম্মেলনে আনারা বেগম জানান, ২০২১ সালে ময়মনসিংহ নগরীর বলাশপুর এলাকায় দালালের মাধ্যমে স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি ক্রয় করে তার পরিবার। এর আগে, ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক বাউন্ডারি করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র উপপ্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। এ নিয়ে ৫ আগস্টের পর আনারা বেগম এবং তার সন্তানসহ কয়েকজনের নামে থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ দেন মনিরুজ্জামান। রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে আনারা বেগম এবং তার ছেলে আল আমিনকে ওই জমিতে না যেতে চাপ প্রয়োগ করা হয়।
তিনি আরও জানান, এই বিরোধ মেটানোর জন্য কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে থানায় দুই পক্ষকে ডাকেন। রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সালিশ হলেও সমাধান না আসায় একপর্যায়ে আল আমিনকে আটক করা হয়। জমিতে না যেতে স্ট্যাম্পে লিখিত দিতে চাপ প্রয়োগ করেন ওসি। তাতে রাজি না হওয়ায় রাজনৈতিক একটি মামলায় পরের দিন রবিবার (২৭ জুলাই) বিকালে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগী আনারা বেগম বলেন, ‘জমির সকল কাগজপত্র দরবারের লোকজন দেইখা যখন বলে আমাদেরটা ঠিক আছে, তিনি আলামিনরে ডাইক্যা ওসি স্যারের রুমে নিয়ে যায়। আমিও পিছন পিছন ছুইট্যা যাই। তখন ওসি স্যার আমার ছেলেরে বলে বাইরিয়া আড্ডি ঘুড্ডি ভাঙ্গাইলাইবো। আমি প্রতিবাদ করলে ওসি স্যার কয় এই বেডি ক্যামনে আমার রুমে ঢুকলো। পরে অন্য পুলিশ আমারে রুম থাইক্কা বাইর কইরা দেয়। এরপর ছেলেডারে যখন লকাপে ঢুকায় তখন ওসি স্যারের হাতে-পায়ে ধইরা অনুরোধ করি নিরীহ ছেলেডারে জেলে ভরলে খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু কোনও কথা শুনেনি ওসি স্যার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে ক্রোকারিজের ব্যবসা করে, রাজনীতির সঙ্গে কোনোদিন জড়িত ছিল না। এখন শুনি রাজনীতির মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠাইছে ওসি স্যার।’ এত অন্যায় কেন করতাছে—বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনারা বেগম।
সাংবাদিক সম্মেলনে আনারা বেগমের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
থানায় জমি নিয়ে সালিশ বৈঠকের কথা অস্বীকার করে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আল আমিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। পুলিশ তার খোঁজে বাড়িতেও গেছিল পায়নি। তাকে আটকের পর রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত করে দেখবো। যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’