রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলদাদপুর ছয়আনি গ্রামে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য ও ছবির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও মালামাল লুটের সঙ্গে সরাসরি জড়িত পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার (৩০ জুলাই) ভোরে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ওই পাঁচ আসামিকে বুধবার দুপুরে রংপুরের গঙ্গাচড়া আমলি আদালতের বিচারক কৃষ্ণকমল রায়ের আদালতে হাজির করা হলে তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গ্রেফতাররা সবাই পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বলে পুলিশ চিহ্নিত করেছে। তারা হলেন- কিশোরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সিঙ্গের ডাবরী গ্রামের লাভলু মিয়ার ছেলে ইয়াসিন আলী, একই উপজেলার মাগুরা গ্রামের নুর আলমের ছেলে স্বাধীন, দক্ষিণ চাঁন্দ খানা গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম, সিঙ্গের ডাবরী গ্রামের রহমান আলীর ছেলে আতিকুর রহমান ও বাগি সিঙ্গের ডাবরী গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে সাদ্দাম হোসেন।
এ বিষয়ে রংপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, গত শনিবার (২৬ জুলাই) রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলদাদপুর ছয়আনি গ্রামের বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থী মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ফেসবুকে অবমাননাকর স্ট্যাটাস দেন। শনিবার বিকালের মধ্যে পুরো বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে আলদাদপুর ছয় আনি গ্রামসহ পুরো গঙ্গাচড়া উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গঙ্গাচড়া থানা পুলিশের একটি দল ওই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে।
এই ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী ও উত্তেজিত জনতা মিছিল বের করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে ও রবিবার কয়েক দফা বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত রবিন্দ্র নাথ রায় বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১২০০ আসামির বিরুদ্ধে গঙ্গাচড়া থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করে। বুধবার দুপুরে তাদের কঠোর পুলিশি পাহারায় আদালতে চালান দেওয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি আল এমরান গ্রেফতার পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এরপর গঙ্গাচড়া আমলি আদালতের বিচারক কৃষ্ণ কমল রায় শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন। সেই সঙ্গে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।