চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপির বের করা ‘বিজয় র্যালিতে’ সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ঘটনায় টনক নড়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের। এ ঘটনায় বুধবার (৬ জুলাই) রাতে অ্যাম্বুলেন্স চালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
অ্যাম্বুলেন্স চালক তৌহিদুল আলমকে দেওয়া এ কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি করোনাভাইরাস চলাকালে উপজেলার করোনেশন সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মানবিক উদ্দেশে কোভিড-১৯ হাসপাতালকে দেওয়া এবং ফটিকছড়ি পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় ও নিয়ন্ত্রণাধীন অ্যাম্বুলেন্স চালক (অস্থায়ী) হিসেবে নিয়োজিত আছেন। গত ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) একটি রাজনৈতিক দলের শোডাউনে পৌরসভার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া গেছে মর্মে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স সাধারণত রোগী পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এমতাবস্থায় কোন পরিস্থিতি এবং কী প্রক্রিয়ায় দলের শোডাউনে পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গমন করেছেন, তা পত্র প্রাপ্তির তিন কার্য দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে উপস্থাপন করার জন্য বলা হলো।’
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর ‘জুলাই-আগস্ট বিজয় শোডাউনে’ ফটিকছড়ি পৌরসভার অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করেন। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার ভালোভাবে নেননি সাধারণ লোকজন।
এ প্রসঙ্গে ফটিকছড়ি পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখেছি। অ্যাম্বুলেন্সটি রোগী আনা-নেওয়ার জন্য ভাড়ায় চালানোর সুযোগ থাকলেও কোনও রাজনৈতিক নেতাকর্মী দলীয় পতাকা হাতে এটি ব্যবহারের সুযোগ নেই। এটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে চালককে শোকজ করেছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির বিজয় র্যালিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি সাইরেন বাজিয়ে পুরো সদর এলাকায় ঘুরেছে। অথচ তাতে কোনও রোগী ছিল না। এটি ব্যবহৃত হয়েছে বিএনপির প্রচারণার অংশ হিসেবে শোডাউনে। অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন দলীয় কর্মীরা। এতে বিস্মিত স্থানীয় লোকজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্স শুধুমাত্র রোগী পরিবহনের জন্য অনুমোদিত। অন্য কাজে ভাড়া দেওয়ার সুযোগ নেই। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভাকে দান করেছিলেন। এটি রেজুলেশনে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল কোনোভাবেই এটি ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে না।’
পৌর সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে ফটিকছড়ি সরকারি করোনেশন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের উপহার হিসেবে কেনা অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভাকে হস্তান্তর করা হয়। পরে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ রেজুলেশন আকারে দান করা অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রহণ করে। তখন থেকে পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালিত হচ্ছে। সেই অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনার জন্য পৌরসভার মাস্টাররোল অনুযায়ী ১২ হাজার টাকা বেতনে একজন চালক নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভায় হস্তান্তর করার পর থেকে গাড়িটি চালাচ্ছেন বলে দাবি করেন চালক তৌহিদুল আলম।
এদিকে, বুধবার (৬ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে তড়িঘড়ি করে বিএনপির পক্ষ থেকে পৌরসভাকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ চার হাজার টাকা পরিশোধ করেন বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তবে ভাড়া বাবদ বিএনপিকে কোনও রশিদ দেয়া হয়নি বলে জানান পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি বড়ুয়া।
পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সের চালক রোগী পরিবহনের কাজে যাচ্ছেন সেটি আমাকে জানিয়েছিলেন। তবে তিনি গাড়িটি নিয়ে রাজনৈতিক শোডাউনে যাচ্ছেন তা জানাননি।’
পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র মুহুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় পৌর প্রশাসক ও ইউএনও অ্যাম্বুলেন্স চালককে শোকজ করেছেন। পত্র প্রাপ্তির ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে লিখিতভাবে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।’
ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আজিমুল্লাহ বাহার বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বের করা বিজয় র্যালিতে সরকারি সম্পত্তি ব্যবহার কোনোভাবেই উচিত হয়নি। সেটির সঙ্গে রাজনৈতিক যে নেতা জড়িত তিনি অদূরদর্শী ও অপরিপক্ব। দলকে ডোবাতে এটি করেছেন। বিএনপির বিরুদ্ধে আজও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। একটি নতুন ও গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এসব গর্হিত কাজ হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর বলেন, ‘বিজয় শোডাউনে যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে দলের আহত নেতাকর্মীদের পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। এটি সরকারি না বেসরকারি, তা আমার জানা ছিল না।’