জুলাই অভ্যুত্থানে সাহসী সাংবাদিকের সম্মাননা পেয়েছেন ফরিদপুরে জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শেখ ফয়েজ আহমেদ (৫০)। ৩ আগস্ট তাকে সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। এ খবর জানাজানি হওয়ার পরে সাংবাদিক মহলে সমালোচনা চলছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) এ সম্মাননা পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন ফয়েজ আহমেদ। এতে তিনি জানান, সাংবাদিকতায় ২০২৪ সালে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও চেক দেওয়া হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিক মহল ছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়।
শেখ ফয়েজ আহমেদ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ফরিদপুর জেলার সভাপতি। তিনি জেলা ক্যাব ও সমবায় ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি তিনি ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা সংবাদ ও চ্যানেল এসের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। গত বছরের ১০ অক্টোবর ফরিদপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন শেখ মুজাহিদুল ইসলাম। ওই মামলার ৯৭ নম্বর আসামি শহরের খোদাবক্স রোড এলাকার শেখ মানিকের ছেলে শেখ ফয়েজ আহমেদ। এটিই জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় করা ফরিদপুরের একমাত্র মামলা।
বিষয়টি জানার পর দুপুরে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের একটি প্রতিনিধিদল জেলার জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে এ ঘটনার লিখিত প্রতিবাদ জানান। এ সময় ফরিদপুরে জুলাই আন্দোলন করা আবরার নাদিম, কাজী রিয়াজ, সোহেল রানা, মাহমুদুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারা বিতর্কিত ব্যক্তিকে দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহার করে জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রাখা প্রকৃত সাংবাদিকদের মূল্যায়নের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জেলার জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ওই ব্যক্তি কীভাবে সাহসী সাংবাদিকের সম্মাননা পেয়েছেন, সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমাদের কোনও মতামত নেওয়া হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’
সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আছে। জেলার সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থেকে দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ভুক্তভোগীরা তাকে গ্রেফতারে ঝাড়ুমিছিল ও মানববন্ধন করেন। সমবায় ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের মামলায় তাকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পান। এসব বিষয়ে কথা বলতে শেখ ফয়েজ আহমেদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তা ছাড়া ফরিদপুর জেলা থেকে একমাত্র আবেদনকারী ছিলেন শেখ ফয়েজ। বিষয়টি যাচাই-বাছাই না করায় এমনটি হয়ে থাকতে পারে।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব পিয়াল বলেন, ‘এ খবর জানতে পেরে আমরা বিস্মিত। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় অবদান রাখা সাহসী সাংবাদিকদের প্রতি অসম্মানের শামিল।’