কবি, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদদের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে নির্বাচনের ডেডলাইন দিয়েছেন ডক্টর ইউনুস। সব রাজনৈতিক দলের চাপে তিনি বাধ্য হয়েছেন।’ শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম হলরুমে জ্ঞানতরু সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ আয়োজিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি’ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন ।
সভায় ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হলো, নতুন রাষ্ট্র গঠন করা। আমাদের সবাইকে এক হয়ে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাজ করতে হবে। আগে রাষ্ট্রের কাঠামো ঠিক করতে হবে, তারপর নির্বাচন করতে হবে।’
প্রবীণ এই সমালোচক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করে বলেন, ‘সবাই শুধু ভোট চায়, নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যেতে চায়। কেউ দেশের কথা, জনগণের কথা ভাবে না। সবাই শুধু ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট করতে চায়।’
চলমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের জীবন আমরা স্থানীয়ভাবে যাপনের সিদ্ধান্তের অধিকার চেয়েছি। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রাষ্ট্র দেয় না। রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ঢাকায় বসে। আমার করের টাকায় রাষ্ট্র চলে, কিন্তু আমার কোনেও উপকারে আসে না।’
জনবান্ধব রাষ্ট্রের কাঠামো প্রসঙ্গ টেনে ফরহাদ মাজহার বলেন, ‘জনগণ আগে, রাষ্ট্র পরে। জনগণের উপরে রাষ্ট্র নয়। রাষ্ট্রের এমন কোনও ক্ষমতা থাকবে না যে জনগণের ব্যক্তি অধিকার খর্ব করে। রাষ্ট্র এমন কোনও আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না যা প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট করে। জীবন ও জীবিকা নষ্ট বা ধ্বংস হয়, এমন কোনও আইন বা নীতি রাষ্ট্র প্রণয়ন করতে পারবে না। ’
রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন সংগ্রাম ছাড়া এই গণ-অভ্যুত্থান হতো না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ সব দলকে নিয়ে একটি নতুন গঠনতন্ত্র করতে হবে, যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। বিদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে বিভিন্ন কমিশন গঠন করে রাষ্ট্রের সংস্কার করা সম্ভব নয়। দেশের মানুষকে নিয়ে যারা কাজ করে, চিন্তা করে– তাদের দিয়েই কমিশন গঠন করে রাষ্ট্রের সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’
জ্ঞানতরু সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন– জ্ঞানতরু সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নেছারউদ্দীন আহমেদ, সাংবাদিক শাহরিন আরাফাত, উলিপুর বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল হোসেন চাঁদ, জুলাই যোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নাহিন, অধ্যাপক আব্দুল বারী, সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রমুখ।