কৃষকশ্রমিক জনতালীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘২৪-এর অবদান আমাদেরও কম নাই। ২৫ বছর আমরা শেখ হাসিনার অবস্থা, কাজ কর্ম যে সমালোচনা করেছি সেটা বৈষম্যবিরোধী নেতারা সেটা করেনি। দেশের মব সৃষ্টি করা, দেশকে অরাজক করা, দেশের আইনশৃঙ্খলার পতন ঘটানো, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো, আপনারা না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ১২-১৩ জন ছেলে গিয়ে ফজলুর রহমানের বাসার সামনে গিয়ে নাচানাচি করছে। এটা ভালো কথা না। তাকে পাগল বলবেন সে কিচ্ছু বলবে না, এটা হয়? ছাত্র আন্দোলনে তার যথেষ্ট অবদান আছে। আজকাল যারা কথা বলছেন তাদের কথায় কোন শালীনতা নেই। এটা সামাজিক অবক্ষয়। এখান থেকে আমরা দেশকে ফেরাতে না পারি- তাহলে এটা জঙ্গলের দেশ হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের এই ঘটনায় মঞ্চ ৭১-এর শ্রোতা এবং যারা বক্তা ছিলেন- কম বেশি সবাকেই পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাদের সসম্মানে মুক্তি দেওয়া হোক। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে আমি এটা আশা করবো।’
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকালে টাঙ্গাইল শহরের নিজ বাসভবন সোনার বাংলায় জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আজকে ‘‘মঞ্চ ৭১’’ নামে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি আলোচনা সভায় আমাদের নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী গিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেন প্রধান অতিথি ছিলেন, জেড আই খান পান্না তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন। এ সময় প্রায় একশ জনের মব গিয়ে তাদের অনুষ্ঠান আলোচনা সভা বানচাল করে দিয়েছে। এটা কোনও গণতান্ত্রিক দেশে কারও সভা সমাবেশ বানচাল করা কোনও সংবিধানে অথবা আইনানুগ কোনও সুযোগ নেই। তাদের এখনও ডিবি অফিসে রাখা হয়েছে। আপনারা জানেন, লতিফ ভাই অন্য ধরনের মানুষ। লতিফ সিদ্দিকীর জন্ম না হলে টাঙ্গাইলের রাজনীতি অনেক কিছুই হতো না। যেমন বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না, ঠিক তেমনি লতিফ সিদ্দিকীর জন্ম না হলে আমরা রাজনীতিতে আসতাম না।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে লতিফ সিদ্দিকী প্রায় ৪০ বার জেলে গেছেন। বাংলাদেশের আমলেও কয়েকবার জেলে গেছেন। ওনারা ভাবছেন, কথা বলছেন, ছেড়ে দিলে দেবেন, না হলে কোর্টে যাবেন। আমরাও কোর্টে যাবো। দেখতে হবে আইনানুগভাবে চলছে কি না। ওনারা একটা সেমিনারে গিয়েছিলেন, সেখানে কী কথা হবে, সেটাও হয়নি। যেকোনও গ্রেফতার দেখালে কোন আপত্তি নাই। তারা মিথ্যাও দেখাতে পারে। কিন্তু গ্রেফতার না দেখিয়ে কোনও কারণ না দেখিয়ে একজন স্বাধীন নাগরিককে এক মিনিটের জন্য কোথাও আটক রাখা যায় না। লতিফ সিদ্দিকীর নামে কোনও ঋণ খেলাপি বা কোনও মামলা নেই। আইনিভাবে সরকার চললে আমরা আইন দিয়েই মোকাবিলা করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদৌ তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না জানি না। আমি আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে দেশবাসীকে এবং আন্তর্জাতিক দুনিয়াকে জানাতে চাই। ২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিজয়, আমি স্বাধীনতার কাছাকাছি মনে করি। সেই বিজয়ের সফলতা আমি সবসময় কামনা করি। কিন্তু সেই বিজয়ী বীরদের কার্যকলাপে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমি তো ভেবেছিলাম, তাদের এই বিজয় হাজার বছর চিরস্থায়ী হবে। কিন্তু এক বছরে তাদের এই বিজয় ধ্বংসের দিকে চলে যাবে এটা আমরা আশা করিনি। এটা যদি বলা হয়, তাহলে আওয়ামী স্বৈরাচারের চাইতে, আওয়ামী দোসরদের চাইতে এই স্বৈরাচারী তো অনেক বড় স্বৈরাচার। মানুষকে কথা বলতে দিচ্ছে না। মত প্রকাশ করতে দিচ্ছে না।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশে একমাত্র সব চাইতে বড় সমস্যা সুন্দরভাবে নিরপেক্ষভাবে একটি ভোট অনুষ্ঠান। ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে দিয়ে ভোট দিতে পারে। এটার মস্ত বড় সংস্কার দরকার। নিরাপত্তা আনা দরকার, আর অন্য কিছু অনির্বাচিত কারোর ধারা করা সম্ভব না, উচিত না এবং সেটা মানুষ মেনে নেবে না।’ সংবাদ সম্মেলনে কৃষকশ্রমিক জনতালীগ ও তার অনুসারী কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।