খুলনায় লাশ উদ্ধারের পর সাংবাদিক ওয়াহেদ উজ জামান বুলুর মৃত্যুরহস্য দানা বাঁধছে। রাতে ঘটনার আগে রূপসা সেতুর ওপর এক নারীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হতে দেখেছেন লোকজন।
ছোট ভাই আনিসুজ্জামান দুলু বলেন, ‘পারিবারিকসহ নানান ঘটনায় ভাই চাপের মধ্যে ছিলেন। প্রথম স্ত্রী তিন মাস নিখোঁজ, এক নারীর দ্বিতীয় বিবাহ দাবি ও এক কাজের মেয়ের বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ নিয়ে মানসিক চাপে ছিলেন তিনি। এসব চাপ থাকলেও তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। ময়নাতদন্ত শেষে জানাজা দিয়ে লাশ গোয়ালখালী কবরস্থানে দাফন করা হবে।’
শ্যালিকা নুরুন্নাহার পারভিন জানান, ঘটনার দিন সকালে তার বাসা থেকে বের হন। দুপুর থেকে তিনি বুলুর মোবাইলে ঢুকতে পারেননি। রাতে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে রূপসা সেতু এলাকায় গিয়ে লাশটি বুলুর বলেই শনাক্ত হয়।
বন্ধু কামরুল হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর স্পটে গিয়ে দেখেছি। তাতে বুলুর মৃত্যু অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। পুলিশের তদন্ত জরুরি মনে করছি।’
নৌপুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মুহিদুল হক বলেন, ‘সুরতহাল রিপোর্টে বুলুর মুখ থেঁতলানো, দুই হাত ভাঙা ও গায়ে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর প্রকৃত তথ্য বলা সম্ভব হবে।’
সাংবাদিক শুভ্র শচীন ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ভাগ্যবিড়ম্বিত সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ পাওয়ার সঙ্গে মিল রয়েছে খুলনার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওয়াহেদ উজ জামান বুলু ভাইয়ের। বুলু ভাইও বিভুদার মতো বাম রাজনীতির সমর্থক ছিলেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আজ (রবিবার) রাত ৮টার দিকে রূপসা সেতুর ২ নম্বর পিলারের বেজমেন্ট এলাকায় নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। আমি যখন দাকোপ-চালনা থেকে খুলনায় এসে জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকতায় যোগ দিই বুলু ভাই তখন পুরোদস্তুর তারকা সাংবাদিক। কাজ করতেন আজকের পত্রিকা ও ইউএনবিতে। সেই থেকে বুলু ভাইয়ের সঙ্গে সখ্যতা; যা অল্প কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক পর্যায়ে গড়ায়। শিববাড়ি মোড়ের বুলু হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। শিববাড়ি মোড়ের অদূরে ছিল তার বাসা। যদিও কয়েক বছর আগে বুলু ভাইদের বাড়িটি বিক্রি হলে তিনি আর সেখানে থাকতেন না। ব্যক্তিজীবনে নিঃসন্তান এবং পারিবারিকভাবে অসুখী ছিলেন তিনি। মাস চারেক আগে থেকে ভাবি নিখোঁজ বলে জানতাম। খুবই সাদামাটা জীবনযাপন করতেন বুলু ভাই। ছিলেন নিরহুংকার ও বিনয়ী। ভালো মিডিয়া হাউজগুলোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা কমলে অর্থসংকট ও হতাশায় নিমজ্জিত হন। গত তিন চার মাস বুলু ভাইয়ের সঙ্গে আর আমার দেখা হয়নি। ফোনও রিসিভ করা হয়নি। একবার আমার বাসায় এসেছিলেন, কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, বুলু ভাইয়ের সঙ্গে আর কোনোদিনই দেখা হবে না।’