চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। তিন দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। চিকিৎসা নিচ্ছেন নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন পার্কভিউ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চলছে তার চিকিৎসা। রবিবার গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন তিনি। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) পার্কভিউ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের আইসিইউর সামনে বসে রয়েছেন ইমতিয়াজের বাবা আমির হোসেন ও মা শাহানাজ আমিন। ছেলের চিন্তায় বিমর্ষ তারা। কিছুক্ষণ পর পর চিকিৎসকদের কাছে জানতে চান ছেলের অবস্থা কেমন।
ইমতিয়াজের বাড়ি কুমিল্লায়, তবে তার পরিবার তাকে বগুড়ায়। ছেলে আহত হওয়ার খবর পেয়ে সেখান থেকে সোমবার সকালে তার মা-বাবা চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। ছেলের সুস্থতার অপেক্ষায় আইসিইউর সামনে বসে তাদের সময় কাটছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহানাজ আমিন বলেন, ‘আমার ছেলেটার অবস্থা ভালো না। ছেলেকে এভাবে হাসপাতালের বেডে দেখবো তা কখনো বুঝতে পারছি না। আমার একটাই চাওয়া আমার ছেলেটা আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠুক।’
তিনি জানান, ‘রবিবার দুপুরে ছেলের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল। ও বলেছিল আহত বন্ধুদের হাসপাতালে নিচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই খবর এলো, নিজেই রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে। আমার বুকটা তখনই ভেঙে যায়।’
রবিবার স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে হামলায় মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত পান ইমতিয়াজ। সেদিন রাতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর থেকেই তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন।
হাসপাতালের আইসিইউতে কর্মরত এক চিকিৎসক বলেন, ‘ইমতিয়াজের কনশাস লেভেল এখনও ১৫-এর মধ্যে মাত্র ৬/৭। তবে তার রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’
পার্কভিউ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন আরেক ছাত্র মামুন মিয়া। সমাজতত্ত্ব বিভাগের এ ছাত্রের মাথায় আঘাত পেয়েছেন। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সোমবার তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়। তবে তাকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
রবিবার সংঘর্ষে আহত নাইমুল ইসলামকে ভর্তি করা হয় ন্যাশনাল হাসপাতালে। ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের ওই শিক্ষার্থীকে অস্ত্রোপচার শেষে ওই দিন রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করবে। এ জন্য পাঁচ শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি চিকিৎসা কমিটিও গঠন করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শনিবার রাতে এবং রবিবার দিনের বেলায় দুই দফায় সংঘর্ষে কয়েকশ শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩১৫ জন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৮৪ জন। বেসরকারি হাসপাতালে ৩০ জন। সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা ৩ জন। এরমধ্যে পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে ২ জন এবং ঢাকায় হস্তান্তর করা হয়েছে একজনকে। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল থেকেও চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ জন এবং ভর্তি আছেন ২ ছাত্র।

















