রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা একজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের হামলার প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুই পক্ষের হামলায় ২২ জন আহত হন। এর মধ্যে ১৯ জনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হলে পথিমধ্যে একজন মরা যান। বাকি তিন জন নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে যান।
নিহত ব্যক্তির নাম রাসেল মোল্লা (২৮)। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের জতুমিস্ত্রিপাড়া গ্রামের আমজাদ মোল্লার ছেলে। তবে তিনি কোন পক্ষের এটা জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে দরবার শরিফ গড়ে তোলেন নুরুল হক। গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান নুরুল হক। ওই দিন রাতে মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় কফিনের মধ্যে তার লাশ দাফন করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কবর সমতল করাসহ কয়েকটি দাবি জানায় স্থানীয় আলেম সমাজ।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে নুরুল হকের আস্তানায় অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করে উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে কবর সমতলসহ বিভিন্ন দাবি জানায়। অন্যথায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ ও পরে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার জুমার নামাজের পর আনসার ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। কর্মসূচিতে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে হাজির হয়। পরে বিক্ষোভ কর্মসূচি আনসার ক্লাবে শেষ করে তারা। তার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ নুরাল পাগলার বাড়িতে হামলা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, মিছিল নিয়ে প্রথমে নুরুল হকের আস্তানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন দরবারের লোকজন ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে অপর পাশ থেকেও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। একপর্যায়ে কয়েকশ লোক দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে দরবারে হামলা চালান। এ সময় ভক্তদের কয়েকজনকে পেটানো হয় এবং নুরুল হকের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে নুরুল হকের লাশ কবর থেকে তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডের পদ্মার মোড় এলাকায় মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

















