Swadhin News Logo
মঙ্গলবার , ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. আন্তর্জাতিক
  3. কৃষি ও প্রকৃতি
  4. ক্যাম্পাস
  5. খেলাধুলা
  6. চাকরি
  7. জাতীয়
  8. জোকস
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. ধর্ম
  12. নারী ও শিশু
  13. প্রবাস
  14. বই থেকে
  15. বিচিত্র নিউজ

জিন তাড়াতে এসে ধর্ষণের চেষ্টা, দেখে ফেলায় মা-মেয়েকে হত্যা: পুলিশ

প্রতিবেদক
Nirob
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫ ৮:২৭ অপরাহ্ণ
জিন তাড়াতে এসে ধর্ষণের চেষ্টা, দেখে ফেলায় মা-মেয়েকে হত্যা: পুলিশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও তার মায়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মো. মোবারক হোসেন (২৯) নামের এক কবিরাজকে গ্রেফতারের পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্যমতে, জিন তাড়ানোর কথা বলে ঝাড়ফুঁক করার সময় ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান কবিরাজ। মা ওই দৃশ্য দেখে ফেলায় প্রথমে তাকে বালিশচাপা দিয়ে এবং পরে মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করেছেন।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। গ্রেফতার মোবারক হোসেনের বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে। তিনি কুমিল্লা নগরের বাগিচাগাঁও কাজীবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার সময় সোমবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। নগরের বাবুস সালাম জামে মসজিদের এই খাদেম কবিরাজি করেন।

সোমবার সকাল ৭টার দিকে নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরি এলাকার পিটিআই মাঠ সংলগ্ন একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের। তাদের বাড়ি কুমিল্লা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ঘটনায় সোমবার বিকালে নিহত ছাত্রীর বড় ভাই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় মোবারককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

মোবারককে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‌‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের ধারণা, তাকে (শিক্ষার্থী) জিন আসর করেছে। এজন্য ঝাড়ফুঁক করানোর জন্য মেয়েকে নিয়ে স্থানীয় মাদ্রাসার এক শিক্ষকের কাছে যেতেন মা। সেখানে মসজিদের খাদেম মোবারকের সঙ্গে পরিচয় হয়। মোবারক নিজেও কবিরাজি করেন বলে ছাত্রীর মাকে জানান। তখন শিক্ষার্থীর মা মোবারককে তার বাসায় গিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে বলেন। সেই সুবাদে এক মাসের বেশি সময় ধরে মোবারক ওই বাসায় গিয়ে ঝাড়ফুঁক দিয়ে আসছেন।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় মোবারক একটি কমলা রঙের শপিং ব্যাগ ও একটি কালো রঙের ব্যাগ নিয়ে ভুক্তভোগীদের বাসায় ঢোকেন। ওই শিক্ষার্থীকে ঝাড়ফুঁক করে বাসায় পানি ছিটিয়ে দেন। বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে বেলা ১১টা ৩৪ মিনিটে আবার ওই বাসায় ঢোকেন। ফিরে এসে দেখেন ভুক্তভোগী ছাত্রী তার কক্ষে শুয়ে আছেন। তখন ধর্ষণের চেষ্টা চালান। এ সময় শিক্ষার্থীর মা এই দৃশ্য দেখে ফেলেন। তিনি তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মোবারকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে মোবারক বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। এরপর ওই ছাত্রীর কক্ষে ঢুকে আবার ধর্ষণের চেষ্টা করলে তিনি বাধা দিলে তাকে গলা চেপে হত্যা করা হয়। মা ও মেয়েকে হত্যার পর চারটি মোবাইল ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান মোবারক। তার কাছ থেকে সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই বাসায় কমলা রঙের যে ব্যাগটি নিয়ে আসামি প্রবেশ করেন, সেটিও ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের একাধিক ইউনিট ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে। ওই ভবনের নিচতলায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিচতলায় থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখে মূলহোতা মোবারককে শনাক্ত করা হয়। ঘটনার পরই আত্মগোপনে চলে যাওয়া মোবারক সোমবার রাতে ট্রেনে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। এ সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত দেখে আমাদের মনে হচ্ছে হত্যাকাণ্ড দুটি একজনই করেছেন। তবে আমাদের তদন্ত এখনও চলমান আছে। আর কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। তাকে আদালতে পাঠানো প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে।’

আটক অন্য কবিরাজের সংশ্লিষ্টতা মেলেনি

সোমবার দুপুরে জেলার নাঙ্গলকোট থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে আবদুর রব (৭৩) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছিল র‌্যাব। আবদুর রবও একজন কবিরাজ। আটকের পর র‌্যাব জানায়, নিহত ছাত্রীর মা হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগে সর্বশেষ তার সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়া আবদুর রবও দীর্ঘদিন ওই বাসায় যাতায়াত করতেন। তবে মোবারককে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে আবদুর রবের কোনও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লা কোম্পানির অধিনায়ক মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, ‘সন্দেহভাজন হিসেবে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তিনি কবিরাজ হওয়ায় তার কাছ থেকে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। যেগুলো মূল হত্যাকারীকে শনাক্তে কাজে লেগেছে। তাকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করেছি আমরা।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তে ঘটনার সঙ্গে আবদুর রবের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

মা-মেয়েকে হত্যার বিষয়ে কিছু প্রশ্ন

মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় কবিরাজের সংশ্লিষ্টতা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, এমন প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউননের কুমিল্লা প্রতিনিধি।

একই বাসায় দুজনকে হত্যার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‌‘প্রথমবার ঝাড়ফুঁক করা শেষে ওই কবিরাজ চলে গিয়েছিলেন। পরে আবার এসে ছাত্রীর কক্ষে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে মা দেখে বাধা দেন। এ সময় বাগবিতণ্ডা ও পরে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ওই কক্ষ থেকে মাকে সামনের কক্ষে এনে হত্যা করেন। পরে আবার ছাত্রীর কক্ষে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। এতে বাধা দিলে তাকেও হত্যা করেন।’ 

ধর্ষণচেষ্টা ও মাকে হত্যার সময়ে ছাত্রী চিৎকার কিংবা কোনও প্রতিরোধ করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘কবিরাজের ভাষ্যমতে ছাত্রী অনেকটাই অচেতন অবস্থায় ছিলেন। দুই কক্ষে দুজনকে হত্যা করেছেন। মাকে হত্যার সময় মেয়ের কক্ষের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেন। পরে মেয়ের কক্ষে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা ও পরে হত্যা করেছেন। সবদিক বিবেচনায় আমরা তাকে একমাত্র আসামি হিসেবে শনাক্ত করছি।’

ছাত্রীর কক্ষে ও শরীরে রক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক কিছু এখনই বলতে চাচ্ছি না। আরও তদন্তের পর বিস্তারিত বলবো। ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হননি, তা আমরা একবারও বলিনি। হয়তো ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু আসামি আমাদের কাছে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেননি। ময়নাতদন্ত ও মেডিক্যাল প্রতিবেদন পেলে এগুলো নিশ্চিত হওয়া যাবে। আরও অনেক বিষয় তদন্ত শেষে জানাবো।’ 

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক