Swadhin News Logo
শনিবার , ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. আন্তর্জাতিক
  3. কৃষি ও প্রকৃতি
  4. ক্যাম্পাস
  5. খেলাধুলা
  6. চাকরি
  7. জাতীয়
  8. জোকস
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. ধর্ম
  12. নারী ও শিশু
  13. প্রবাস
  14. বই থেকে
  15. বিচিত্র নিউজ

এক সময়ের বখাটে হয়ে গেলেন স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া

প্রতিবেদক
Nirob
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫ ৮:১০ পূর্বাহ্ণ
এক সময়ের বখাটে হয়ে গেলেন স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে ও তাদের সরাসরি পৃষ্টপোষকতায় স্বাস্থ্য খাতের স্বঘোষিত ‘মাফিয়া ডনে’ পরিণত হন রংপুরের মোতাজ্জিরুল ইসলাম মিঠু। গড়ে তোলেন রাজধানী ঢাকা ও রংপুরসহ দেশ বিদেশে অসংখ্য ফ্ল্যাট, আলিসান বাড়ি, জমিসহ হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়।

তিন বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগ নতুন করে দেখিয়ে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটি মামলা করার পর বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) মিঠুকে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেফতার করেছে।

যেভাবে মিঠুর উত্থান

রংপুরের এক সময়ের বখাটে বলে পরিচিত মোতাজ্জিরুল ইসলাম মিঠুর বাড়ি গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে। ধাপ মেডিক্যাল পূর্ব গেট এলাকায় তাদের পৈত্রিক টিনশেড আধাপাকা বাড়ি ছাড়া আর কোনও সম্পদ ছিল না। হঠাৎ এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সহযোগিতায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন নামকরা হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করে তার উত্থান। তখন তার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি এক পর্যায়ে সারা দেশের বেশিরভাগ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মুকুটহীন সম্রাটে পরিণত হন। একচেটিয়াভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন।

তার দাপটে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বড় বড় কর্মকর্তারা ছিলেন জিম্মি। স্বাস্থ্য বিভাগে বড় কর্তা যোগ দিলেই ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার ব্রিফকেস পৌঁছে যেত তার বাসায়। অবস্থা এমনি পর্যায়ে পৌঁছে দেশের বড় বড় কর্তাদের হেলিকপ্টারে সফরসঙ্গী হয়ে রংপুরে আসতেন মিঠু।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে অতিউচ্চ মূল্যে দেখিয়ে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মালামাল সরবরাহ না করেই বিল উত্তোলন, অপ্রয়োজনীয় ও অযাচিত মালামাল সরবরাহ করাসহ বিভিন্ন অপকর্মের হোতা মিঠু। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, মৌলভীবাজার জেনারেল হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, আইএইচটি সিলেট, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল হাসপাতাল সিএমএসডিসহ বিভিন্ন হাসপাতালে মালামাল সরবরাহের নামে শত শত কোটি টাকা লুট করেছেন।

দুদকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মিঠু অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ও দেশের বাইরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে এসব প্রমাণিত হওয়ায় দুদক বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা ও রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৮ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

আগের আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি

২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর তৎকালীন দুদকের সহকারী পরিচালক মশিউর রহমানের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিঠুর মালিকানাধীন রংপুরসহ সারা দেশে ৪১টি সম্পদ জব্দ করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তৎকালীন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আসাদুজ্জামান সব সম্পদ জব্দের আদেশ দেন। যার পারমিশন পিটিশন নম্বর ৪৩৬/২০২৩।

রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্লট, ফ্লাট, রংপুরে বিলাসবহুল বাড়িসহ ৪১টি সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেওয়া হয়। আদেশনামায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা রেজিস্ট্রার, মহাপরিদর্শক আইজিআরসহ সবাইকে আদেশ দেন, কোনোভাবেই যেন মিঠু নামীয় এসব সম্পদ হস্তান্তর করতে না পারে। সেই সঙ্গে ৪১টি সম্পদ যে জব্দ করা হয়েছে তার তালিকা সংবলিত একটি বিজ্ঞপ্তি দুর্নীতি দমন কমিশনকে তাদের নিজ ব্যয়ে বহুল প্রচারিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকে প্রচারের নির্দেশও দেওয়া হয়।

এদিকে ২০২৩ সালেই মোতাজ্জিরুল ইসলাম মিঠুর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারিরও আদেশ দেন আদালত। সেই অনুযায়ী পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এবং দুদকের অনুসন্ধানকারী টিমের দল নেতা মশিয়ার রহমানকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করে আদেশ নেওয়া ছাড়া সম্পদ জব্দে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি মিঠুর জন্মস্থান রংপুরে কমপক্ষে ৩০টির মতো সম্পদের একটিও জব্দ করা হয়নি। দুদকের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ না নেওয়ায় রংপুর মহানগরীর অভিজাত এলাকায় অবস্থিত ১০তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক কছির উদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে হাসপাতাল চালু রাখা হয়েছে।

দুদকের পক্ষ থেকে এতবড় প্রতিষ্ঠান জব্দ করার কোনও আবেদন পর্যন্ত করা হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক, সচিবসহ দেশের বড় বড় হাসপাতালের পরিচালকের নিয়োগ বদলি সব নিয়ন্ত্রণ করতো মিঠু। তবে ২০২২ সালের দিকে মিঠুর একচেটিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল সোচ্চার হলে ক্ষমতা কিছুটা খর্ব হলেও নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ দিয়ে বেনামে তার ঠিকাদারি আর দালালি চলতে থাকে।

তিনি কত বড় ক্ষমতাশালী ছিলেন এর অন্যতম উদাহরণ হলো, বিদেশ যাওয়াতে  আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে গত ৩ বছরে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ বার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। রংপুরেও এক মাস আগে এসে বেশ কয়েকদিন প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়িয়েছেন।

যেসব সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ ছিল

বাড়ি নম্বর ৪/এ রোড ৪এ বনানী ভিওএইচএস ঢাকা, ৫ কাঠা জমি ও ৫ তলা বাড়ি, বাড়ি নম্বর ৪৬ রোড ১০ সেক্টর ৬ উত্তরা ঢাকায় ৫.২৫ কাঠা জমি ও ৪ তলা বাড়ি, বাড়ি নম্বর ১০ রোড নম্বর ৭ সেক্টর ৫ উত্তরায় ৬ তলা বাড়ি, ফ্লাট ১/৩/১ বাড়ি ৮ রোড ৬, ব্লক সিতে বনানী ঢাকা ১৮২৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট, সুবাস্তু ফিরোজা ভিলা, অ্যাপার্টমেন্ট নম্বর ৭/এ রোড ৩৫ গুলশাল আবাসিক এলাকা ঢাকায় ৩৭২৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট ও দুটি কার পার্কিং, রিগাল হাইটস ফ্ল্যাট এফ/৪ বাড়ি ১ দক্ষিণ কল্যাণপুর ঢাকা ১৫৮৩ বর্গফুট ফ্ল্যাট, সুবাস্তু নজরভ্যালি প্রজেক্ট ৩ নম্বর টাওয়ার অ্যাপার্টমেন্ট নং ৬/সি, হোল্ডিং নম্বর গ প্রগতি সরনী গুলশাল ঢাকা ৫৮৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট, প্লট ২৫ ও প্লট ২৩ সেক্টর ১৫সি রোড নম্বর ২/সি উত্তরা ঢাকায় ৩ কাঠার দুটি প্লট, টঙ্গি এলাকায় ২ বিঘা জমি, রংপুরের বুড়িরহাট রোড ধাপ এলাকায় কয়েক কোটি টাকার বাড়ি। রংপুর সদরের কোবারু এলাকায় ৮ শতক জমি, চব্বিশ হাজারী এলাকায় ৭৫ শতক জমি, কোবারু এলাকায় ২৭.৫০ শতক জমি, বুড়িরহাট রোডে ৩ শতক জমি, নগরীর মন্থনা এলাকায় ১০ শতক জমি।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক