জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয় বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে। এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১,৯১৯ জন। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ভোট কাস্ট হয়েছে ৮,০১৬টি অর্থাৎ ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকালে ভোটগ্রহণ শেষ হলেও ভোট গণনা শেষ হয় রবিবার দুপুরে। তাই প্রশ্ন উঠেছে এই কম সংখ্যক ভোট গণনায় এতো সময় কেন লাগলো?
ভোট গণনা শুরু হওয়ার পরই নির্বাচন কমিশন থেকে শুক্রবার সকালে শেষ হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানানো হয়। তবে এরপর দফায় দফায় পরিবর্তিত করা হয় ফল ঘোষণার সময়।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর, রাত পার হয়ে সেটা শনিবার সকালে ঘোষণার সময় নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে জানানো হয় শনিবার সন্ধ্যায় হবে ফলাফল ঘোষণা। এবং দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ জন্মে তেমনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে সমালোচনার ঝড়। ১২ হাজার ভোট কতজনে প্রায় ৪৮ ঘণ্টায় শেষ করে তা নিয়ে কচ্ছপের ছবি দিয়ে ট্রলও হয়ে গেছে দুই দিনে।
কেন এই দেরি? এমন প্রশ্নের জবাবে শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব এ কে এম রাশেদুল আলম সাংবাদিকদের জানান, ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হলো কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন আয়োজনের অভিজ্ঞতা না থাকায় ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে।
তার বক্তব্যের পর আলোচনা নতুন মোড় নেয়- নির্বাচন কমিশন অভিজ্ঞতার দোহায় দিতে পারে কি-না এবং ১২ হাজার ভোট গণনায় কী ধরনের অভিজ্ঞতার দরকার ছিল।
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে, যা শেষ হয় বিকাল ৫টার দিকে। ওইদিন রাত সোয়া ১০টার দিক থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। এই নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে প্রায় ৬৭-৬৮ শতাংশ। জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন।
ভোট গনার তৃতীয় দিন শনিবার শেষ সময়ে এসে রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে যে অভিযোগগুলো পদত্যাগপত্রে লেখেন তা থেকে স্পষ্ট হয়, কেবল অভিজ্ঞতা না থাকা এই গণনা দীর্ঘসূত্রিতার কারণ হতে পারে না।
তিনি লিখেছেন, ‘একটি ভীষণ রকমের দুর্বল প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, অতিমাত্রার রাজনৈতিক সমীকরণ, এমনকি একজন শিক্ষকের অকাল প্রয়াণ, যিনি কোনোভাবে ভোট গণনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগই পাননি, তাকেও নির্বাচনের ভোট গণনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার মিথ্যা অভিযোগ এবং অদৃশ্য চাপ আমাকে এই কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করতে নৈতিকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।’
দুই দিনের এই গণার সমালোচনার পর শেষ মুহূর্তে কেন পদত্যাগ করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্নিগ্ধা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনায় একজন নিরপেক্ষ শিক্ষক। আমি কোনও দল অনুসরণ করিনি কখনও। নৈতিকতার জায়গায় যখন নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে তখন সেটার সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করা যায় না। এর বেশি আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
এর আগে নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়মের অভিযোগে ভোটগ্রহণের দিনেই নির্বাচন বর্জন করেছিল পাঁচটি প্যানেলসহ বেশ কয়েক স্বতন্ত্র প্রার্থী। অনিয়মের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনের এক সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। তিনি ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম জাবি শাখার সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি, বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। অনেক অভিযোগ উঠেছে। আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হয়েছে যাতে আমি পদত্যাগ না করি। গতকাল থেকেই আমার ওপর চাপ ছিল, তবুও আমি পদত্যাগ করছি। এখন পদত্যাগ না করলে পরে যদি অনিয়মের কথা বলি, তখন প্রশ্ন উঠবে কেন পদত্যাগ করিনি।’
ফলাফল বিলম্ব প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা জাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করেছি। আমাদের ভোট গণনা হাতে করতে হয়েছে কয়েকটি দলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, যদিও শুরুতে আমরা ওএমআরে করতে চেয়েছি। হল সংসদের ৮০০০ পেপার ও প্রায় ২৪০০০ কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যালট পেপার আমাদের হাতে গণনা করে দেখতে হয়েছে সেজন্য বিলম্ব হয়েছে। এছাড়াও আমাদের কিছু আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আছে, সেগুলো সম্পন্ন করতেও বেশ সময় লেগেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. সুলতানা আক্তার বলেন, ‘আমি আমার সহকর্মীর মৃত্যুতে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ এবং আমার সহকর্মীর এই মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনা দায়ী, নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনা দায়ী, আমি এই মৃত্যুর বিচার চাই। আপনারা হাত দিয়েই যদি কাউন্টিং করাবেন তাহলে মেশিন কিনেছেন কেন। তাহলে আগে থাকতেই বলতেন আমাদেরকে দিয়ে ভোট নেয়ালেন, আমাদেরকে দিয়ে যদি কাউন্টিংও করাতে হয় তাহলে হল থেকেই করাতেন। এগুলো অব্যবস্থাপনা ছাড়া আর কিছুই নয়।’