জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বগুড়ায় শহীদ ১৬ জনের কবর পাকা করার কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। সবগুলো কবরে ইটের গাঁথুনির কাজ শেষ হয়েছে। এখন নামফলকের কাজ চলছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যবিবরণী অনুযায়ী বগুড়া জেলা পরিষদ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
১৬ শহীদ হলেন- কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামের শামছুল হক ফকিরের ছেলে মনিরুল ইসলাম, বগুড়া সদরের বানদীঘি পূর্বপাড়ার মৃত আমির উদ্দিন সরকারের ছেলে আবদুল মান্নান, বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি এলাকার আশিকের ছেলে সিয়াম শুভ, বগুড়া সদরের আকাশতারা গ্রামের মৃত কিছর উদ্দিন খাঁর ছেলে কমর উদ্দিন খাঁ, দুপচাঁচিয়া উপজেলার চক সুখানগাড়ী গ্রামের শাজাহান আলীর ছেলে আবু রায়হান, গাবতলী উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের মোকলেছার রহমানের ছেলে শাকিল হাসান, নন্দীগ্রামের ভুস্কুর মাদ্রাসাপাড়া গ্রামের ফেরদৌস রহমানের ছেলে সোহেল রানা, গাবতলীর গোড়দহ উত্তরপাড়ার মুসা সরদারের ছেলে জিল্লুর সরদার, সোনাতলার উত্তর দীঘলকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে আবদুল আহাদ সৈকত, সারিয়াকান্দির জামথল গ্রামের মুঞ্জু মিয়ার ছেলে রহমত মিয়া, শিবগঞ্জের পলিকান্দা গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে সেলিম হোসেন, শিবগঞ্জের পঞ্চদাশ গ্রামের দিলবরের ছেলে মো. রনি, গাবতলীর তেলিহাটা গ্রামের শাহিন আলম প্রামাণিকের ছেলে সাব্বির হাসান, বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি গ্রামের মৃত মজনু প্রামাণিকের ছেলে মো. মাহফুজ, বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার জিয়াউর রহমানের ছেলে জুনাইদ ইসলাম রাতুল এবং বগুড়া শহরের বৃন্দাবনপাড়ার মৃত মজিবুর রহমান মন্ডলের ছেলে শিমুল মন্ডল মতি।
বগুড়া জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের জুলাই শহীদ হিসেবে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বগুড়ায় শহীদ ১৬ জনের মধ্যে শিবগঞ্জে দুটি কবর স্থানীয়ভাবে পাকা করা হয়েছে। জেলা পরিষদ টেন্ডারের মাধ্যমে অবশিষ্ট ১৪ জনের কবর পাকা করছে। কবরগুলোর কাজ দৃষ্টিনন্দন করতে সিরামিকের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ওপরে মাথার কাছে মার্কেল পাথরে শহীদের নাম ও তাদের সম্পর্কে বর্ণনা থাকছে। এর মধ্যে শহরের নামাজগড় আঞ্জুমান-ই-গোরস্থানে সিয়াম শুভ, জুনাইদ ইসলাম রাতুল ও শিমুল মন্ডল মতির কবর রয়েছে। গাবতলী, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, দুপচাঁচিয়া, শিবগঞ্জ ও কাহালু উপজেলায় নিজ নিজ এলাকায় অন্যদের কবর আছে। সবগুলো পাকা করার কাজ শেষপর্যায়ে।
শিবগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলমের ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহীদ সেলিম হোসেন ও শহীদ মো. রনির কবর পাকা করা হয়েছে। সেলিম হোসেন মাস্টারের কবর রয়েছে বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের তালিকান্দা ও রনি কবর পীরব ইউনিয়নের পঞ্চদাশ গ্রামে। তাই জেলা পরিষদ বাকি ১৪ কবর পাকা করছে।
মীর শাহে আলম জানান, শহীদদের আত্মত্যাগের কথা যাতে কেউ ভুলে না যায়, সেজন্য শহীদ হওয়ার সাত দিনের মধ্যে সেলিম ও রনির কবর পাকা করে দিয়েছেন তিনি। কবর দেখলেই যাতে মানুষের মনে গণঅভ্যুত্থানের কথা মনে হয়, সেজন্য পাকা করা হয়েছে।
বগুড়ার নামাজগড় আঞ্জুমান-ই-গোরস্থানের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম নয়ন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিটি কবর পাকা করতে গোরস্থানের পক্ষ থেকে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ায় পর পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে ওই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এই গোরস্থানে থাকা তিন শহীদের কবর ইতোমধ্যে পাকা করা হয়েছে। ঠিকাদার গত ১ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করেন। গাঁথুনির কাজ শেষ হয়েছে। এখন নামফলক স্থাপন করলেই কাজ শেষ হবে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা ও অন্যান্য কর্মকর্তারা কবরস্থান পরিদর্শন করেছেন।’
বগুড়া জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী (প্রেষণে) মোহায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে এই জেলায় মোট ১৬ জন শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে শিবগঞ্জে দুটি কবর ব্যক্তি উদ্যোগে পাকা করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৪টি কবর জেলা পরিষদের অর্থায়নে পাকা করা হচ্ছে। প্রতিটি কবরের জন্য এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরএইচ এন্টারপ্রাইজ কাজগুলো করছে।’
তিনি বলেন, ‘সিরামিকের ইট দিয়ে আড়াই ফুট উঁচু করে কবরগুলো পাকা করা হয়েছে। এখন মার্বেল পাথরের নামফলক স্থাপন করা হলেই কাজ শেষ হবে।’
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ ও জাতির স্বার্থে আত্মদানকারী ব্যক্তিগণকে জুলাই শহীদ হিসেবে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এজন্য কবরগুলো পাকা করা হয়।’