সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পূর্বঘোষিত তৃতীয় দফার তিন দিনের কর্মসূচির শেষ দিনে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে অন্যদিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের চাপ কম রয়েছে। পাশাপাশি সহিংসতাকে কেন্দ্র করে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বরাবর প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার শেষ দিন। এদিন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদি ইউনিয়নের পুখুরিয়া ও হামিরদি এলাকায় কিছু সময় অবরোধ করলেও পরক্ষণেই তুলে নেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কোথাও অবরোধের ঘটনা ঘটেনি।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মহাসড়কের হামিরদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায়, বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। পরে নিজেদের সমঝোতায় সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ তুলে নেন। তবে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ সময় স্থানীয়রা নতুন করে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান। দুই ইউনিয়নের পুনর্বহালের দাবিসহ দাবিগুলো তুলে ধরে স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম খান বলেন, ‘আলগী চেয়ারম্যানকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে, দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, রাতের বেলায় প্রশাসন দিয়ে হয়রানি করা যাবে না এবং নতুন করে মামলা দেওয়া যাবে না। এসব শর্ত না মানলে আন্দোলন চলবেই।’ এ ছাড়া বেলা ১১টা থেকে সবাই একযোগে কর্মসূচিতে যাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বর-সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। সেখানে অবস্থান করেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা।
অপরদিকে সহিংসতার পর গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক জানান, ইউনিয়ন দুটি পুনর্বিবেচনাকরণে রাতেই নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুতে তিনি উল্লেখ করেন, ফরিদপুর-২ এবং ফরিদপুর-৪-এর সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। উক্ত তালিকায় ফরিদপুর-৪-এর অন্তর্গত ২টি ইউনিয়ন, আলগী ও হামিরদী জাতীয় সংসদীয় আসন ফরিদপুর-২-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকা প্রকাশিত হওয়ার ফলে গত ৪ সেপ্টেম্বর দুটি ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ উক্ত আসন বিন্যাস বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। সর্বশেষ সোমবার বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। এর প্রেক্ষিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার কারণে সাধারণ জনগণকে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবির সমর্থনে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে জনগণ মেনে নিতে পারেনি। উক্ত দুটি আসনের সর্বস্তরের জনগণ এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মর্মে জানা যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা না হলে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন দুটি পুনর্বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

















