বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকোতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের হেনস্তা এবং তাদের আন্দোলনের অযৌক্তিক তিন দফা দাবির প্রতিবাদে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। গাজীপুরের ভুরুলিয়া তিতাস গ্যাস সংলগ্ন রেলগেট এলাকায় রেল ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
কর্মসূচিতে গাজীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া এমআইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রয়েল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ভাওয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি ভুরুলিয়া ঢাকা-রাজশাহী রেলরুটের গাজীপুর মহানগরের ভরুলিয়া এলাকায় অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা রেলপথে অবরোধ করেন। এ সময় গাজীপুর নগরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত ষড়যন্ত্র ও অযৌক্তিক তিন দফা দাবি নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ১০ম গ্রেড বাতিল করে যারা মব সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সাত দফা দাবি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৮ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক গঠিত ৯ সদস্যের পে অ্যান্ড সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ নির্ধারণ ও নিশ্চিত করা হয়। পরে ১৯৯৪ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেন, যাতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের পদে কর্মরত ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান এবং তা নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। উপরোক্ত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট প্রমাণ করে যে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ সম্পূর্ণভাবে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত এবং সরকারিভাবে স্বীকৃত একটি পদ। অথচ বর্তমানে দেশের কিছু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষার্থীরা এই পদে প্রবেশাধিকার দাবি করছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
সব প্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামোতে সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের যার ১ অনুপাত তা ৫ করতে হবে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক নির্ধারিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে ৩০ ভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৯৪ সালে বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অমান্য করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদের পরিবর্তে পল্লী বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিয়ে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া কতিপয় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমের গুণগত মান রক্ষার্থে শিক্ষক শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার ১ অনুপাত ১২ করে শিক্ষক স্বল্পতা দূরকরণের উদ্যোগ এবং কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সাত দফা দাবিগুলো হলো
১. প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র ডেস্ক ও ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিভাজন করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের ডেস্ক এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নিয়োজিত করা; একই সঙ্গে সরকারি প্রজ্ঞাপনের আলোকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নির্ধারিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী/সমমানের পদ সংরক্ষণ করা।
২. একমুখী প্রকৌশল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা, মেধার অপচয় রোধ করা, প্রকৌশলীদের পেশা পরিবর্তন প্রতিরোধ করা এবং প্রকৌশল সংস্থায় প্রশাসনিক পদে প্রশাসনিক ক্যাডারের জনবল নিয়োগ করা।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী/সমমানের পদ থেকে সহকারী প্রকৌশলী/সমমানের পদে পদোন্নতির হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করা।
৪. আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং টিম কনসেপ্ট অনুযায়ী সব প্রকৌশল সংস্থার জনবল কাঠামোতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও দক্ষ জনবলের অনুপাত ১:৫:২৫ নির্ধারণ করা।
৫. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং টিএসসিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:১২ অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা; ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কারিকুলাম ইংরেজি মাধ্যমে রূপান্তরসহ আধুনিকায়ন করা।
৬. সব প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং সনদধারীদের ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি বৃদ্ধি করা।
৭. কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত ৬ দফা দাবি অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের ৪০ লক্ষাধিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও প্রায় চার লাখ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএসসি প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা যে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক। তাদের প্রতিটি দাবি দেশের চালিকাশক্তি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ক্যারিয়ারে আঘাত হানে। এই দাবি জাতীয় কর্মক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াবে।