কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯২৬ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন ফেব্রিকস আমদানি করেছে ঢাকার পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এনএইচ অ্যাপারেলস লিমিটেড। এলসিবিহীন বা ফ্রি অব কস্টে (এফওসি) আমদানি করা এসব ফেব্রিকস ইতিমধ্যে খালাস করেও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না; তার লিখিত ব্যাখ্যা সাত দিনের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। তবে এখনও ব্যাখ্যা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনএইচ অ্যাপারেলস ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৫২ দশমিক ৭২ মেট্রিক টন তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। রফতানিকৃত তৈরি পোশাকে ব্যবহৃত ফেব্রিকসের পরিমাণ ২৯৫ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন। হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি এফওসির মাধ্যমে বন্ড সুবিধায় ৫০ শতাংশ ফেব্রিকস আমদানি করার কথা। যদি তার চেয়ে বেশি অর্থাৎ রিভলভিং পদ্ধতিতে ৫০ শতাংশের বেশি পণ্য এফওসির মাধ্যমে বন্ড সুবিধায় আমদানি করতে হয়, তাহলে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের প্রত্যয়নপত্রের প্রয়োজন হবে।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এফওসির ভিত্তিতে ১ হাজার ১১৩ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন ফেব্রিকস বন্ড সুবিধায় আমদানি করেছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১৩ দশমিক ৯৭ মেট্রিক টন ফেব্রিকস এফওসির ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। তার মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৬ মেট্রিক টন আমদানি করেছে তারা। তবে অনুমোদন ছাড়াই আরও ৯২৬ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন ফেব্রিকস বেশি আমদানি করেছে মেসার্স এনএইচ অ্যাপারেলস লিমিটেড।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, নিয়মের বাইরে বেশি পণ্য আমদানি করলে শুল্ক দিয়ে বন্দর থেকে ছাড় নিতে হয়। অথচ অনুমোদন ছাড়াই ৯২৬ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন ফেব্রিকস আমদানি করেছে এনএইচ অ্যাপারেলস লিমিটেড। পরে শুল্ক না দিয়ে খালাস নিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করেছে এবং শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
বিষয়টি পরে জানাজানি হওয়ার পর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসেও তোলপাড় শুরু হয়। তবে এ নিয়ে কাস্টমসের কোনও কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
এরই মধ্যে এ ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার একেএম আহসান হাবীবের সই করা একটি শোকজ নোটিশ ৮ সেপ্টেম্বর মেসার্স এনএইচ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দেওয়া হয়। নোটিশে বলা হয়, আপনার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এনএইচ অ্যাপারেলস লিমিটেড, ঢাকা (বন্ড লাইসেন্স নং-২০৫৮/কাস-এসবিডব্লিউ/২০২০, সংগৃহীত আমদানি-রফতানি তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নিরীক্ষা মেয়াদে ২৫২ দশমিক ৭২ মেট্রিক টন তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। সূত্রোক্ত স্মারকের ২নং আদেশ মোতাবেক রফতানিকৃত তৈরি পোশাকে ব্যবহৃত ফেব্রিকসের পরিমাণ ২৯৫ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন। সে হিসাবে সূত্রোক্ত ১নং এসআরও-এর বিধি-৭ মোতাবেক ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নিরীক্ষা মেয়াদে এফওসির ভিত্তিতে আমদানিযোগ্য ফেব্রিকসের পরিমাণ হবে ১৪৭ দশমিক ৮৪ মেট্রিক টন। কিন্তু সংগৃহীত আমদানি তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইতিমধ্যে আপনার প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এফওসির ভিতিতে ১ হাজার ১১৩ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন ফেব্রিকস বন্ড সুবিধায় আমদানি করেছে। এর মধ্যে আপনার প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩নং পত্রের মাধ্যমে এই দফতর থেকে ১১৩ দশমিক ৯৭ মেট্রিক টন ফেব্রিকস এফওসির ভিত্তিতে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। দফতর থেকে ইস্যুকৃত সূত্রোক্ত ৩নং পত্রে বর্ণিত সেলস কন্ট্রাকের বিপরীতে অনুমোদিত ১১৩ দশমিক ৯৭ মেট্রিক টন। তার মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৬ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ আপনার প্রতিষ্ঠান দফতরের অনুমোদন ছাড়া ৯২৬ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন ফেব্রিকস আমদানি করেছে।
শোকজ নোটিশে আরও বলা হয়, ফলে আপনার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সূত্রোক্ত ১নং এসআরও লঙ্ঘনপূর্বক অনুমোদন ছাড়া এফওসির ভিত্তিতে ৯২৬ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন ফেব্রিকস বন্ড সুবিধায় আমদানি করা অবৈধ। আপনার প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের কর্মকাণ্ড কাস্টমস আইন-২০২৩-এর ধারা ১১৮ ও ১২৬ ভঙ্গসহ বন্ড লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘিত হওয়ায় একই আইনের ধারা ১৭১ (১)-এর টেবিলভুক্ত ক্লজ ২, ২২ ও ২৩(২) অনুযায়ী দণ্ডযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না; তার কারণ ব্যাখ্যা সংবলিত লিখিত জবাব এই পত্র জারির সাত দিনের মধ্যে এই দফতরে দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হলো। এ ছাড়া অনুমোদন ছাড়া এফওসির ভিত্তিতে পণ্য আমদানিপূর্বক অবৈধভাবে খালাস করায় তথা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় আপনার প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স কেন সাময়িকভাবে স্থগিতসহ বিন লক করা হবে না, সে বিষয়েও আপনাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
তবে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘গত ৮ সেপ্টেম্বর মেসার্স এন এইচ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শোকজ নোটিশ দেওয়া হলেও এখনও কোনও জবাব দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।’