যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি বাগরাম ফেরত চাওয়ার দাবি তুলেছেন। তবে তালেবান প্রশাসন স্পষ্টভাবে তার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান স্টাফ ফাসিহুদ্দিন ফিতরাত স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কিছু মানুষ একটি রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে ঘাঁটিটি ফেরত নিতে চায়। আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটি নিয়েও কোনো চুক্তি সম্ভব নয়।’
বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত না দিলে কঠিন শাস্তির ইঙ্গিত দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দু’দেশের মধ্যে এই এক বিমানঘাঁটি নিয়ে কেন এতো টানাহেঁচড়া।
লন্ডনে এক সফরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সেই ঘাঁটি আবার চাই।’
তিনি দাবি করেন, চীনের কাছাকাছি অবস্থানেই ঘাঁটিটি হওয়ায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ‘ওটা চীনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জায়গার মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে,’ মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর প্রায় দুই দশক আফগানিস্তানে অবস্থানকালে বাগরামই ছিল মার্কিন সেনাদের প্রধান ঘাঁটি। তবে ২০২১ সালে, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘাঁটিও ত্যাগ করে।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটি ছিল দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র। সোভিয়েত যুগে নির্মিত এ ঘাঁটিকে মার্কিন সেনারা ব্যবহার করেছিল আফগান যুদ্ধের মূল ঘাঁটি হিসেবে।
মোট ৭৭ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত বাগরামে দুটি বিশাল রানওয়ে আছে। যেখানে একটি রানওয়ে ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই রানওয়েতে ‘বি-৫২’ বোমারু বিমান ও বিশাল কার্গো বিমান সহজেই ওঠানামা করতে পারে। সেজন্য ঘাঁটিটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও চীনকে চোখে চোখে রাখতে বাগরাম বিমানঘাঁটির কোন বিকল্প নেই।
ট্রাম্প বারবার বলছেন, বাইডেন প্রশাসনের ২০২১ সালের আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার ছিল ‘একটি মারাত্মক ভুল’। এমনকি ট্রাম্প প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, বাগরাম শুধু আফগানিস্তান নয়, চীনকেও নজরদারির আওতায় রাখার একটি শক্ত ঘাঁটি।
যদিও নিজের প্রথম মেয়াদে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে ‘দোহা চুক্তি’ করেন ট্রাম্প নিজেই। তবে তার দাবি, সেনা প্রত্যাহারের পরও ওয়াশিংটনের নিয়ন্ত্রণেই রাখতে চেয়েছিলেন ঘাঁটিটি।
তবে, তালেবান সরকার বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত দেবে না এমন ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস।
অন্যদিকে, চীন বিষয়টিকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় হুমকি হিসেবে দেখছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে আফগান জনগণ।’
প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই বিমানঘাঁটি এতো গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে এটি এমন একটি ঘাঁটি, যেখান থেকে পুরো এশিয়ার ওপর নজরদারি করা সম্ভব। কারণ মধ্য এশিয়ার এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ যে নেবে তার রাজত্বেই থাকবে ইউরেশিয়া।
সূত্র: আল জাজিরা।
/এআই