অবিরাম বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ভারতের উজানে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত গজলডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে তিস্তা নদীর পানি মারাত্মক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কন্ট্রোলরুম জানিয়েছে, রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার হলেও এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, গঙ্গাচড়ার মহিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন।
এদিকে, পাউবো রংপুর ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ২-৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর আর ফসলি জমি। ফলে ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, কচুয়া, চড় ইছলি, জয়রাম ওঝা, কোলকোন্দ ইউনিয়নের কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারীসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেক পরিবার বসতি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলবেষ্টিত ২০টি গ্রাম। ওই সব এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে ২-৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে নিকটস্থ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে, মহিপুর এলাকায় অবস্থিত শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তা সেতু রক্ষাবাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরেছে। এলাকাবাসী বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে ফাটল মেরামত করা না হলে রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাটসহ বুড়িমারী স্থলবন্দরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাব না রয়েছে।
চরইছলী ও জয়রাম ওঝা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার ও সাহেব আলী জানান, পানির প্রবল স্রোতে বাড়িঘর ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মহিপুর এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে চলে এসেছেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বানভাসি মানুষদের মাঝে শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।