Swadhin News Logo
বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর ২০২৫ | ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে প্রাণ হারান রাজবাড়ীর নজরুল, ৫ মাস পর জানল পরিবার

প্রতিবেদক
Nirob
অক্টোবর ৯, ২০২৫ ৮:১৪ অপরাহ্ণ
রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে প্রাণ হারান রাজবাড়ীর নজরুল, ৫ মাস পর জানল পরিবার

রাজবাড়ী করেসপনডেন্ট:

প‌রিবা‌রের স্বচ্ছলতা ফেরা‌তে রাশিয়া গিয়ে নি‌জের ইচ্ছা‌র বিরু‌দ্ধে সাম‌রিক প্রশিক্ষণ শে‌ষে ইউক্রেন যুদ্ধে গিয়ে নিহত হয়েছেন রাজবাড়ীর নজরুল ইসলাম (৪৭) নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্য। 

বুধবার (৮ অক্টোবর) নিখোঁজের সাড়ে ৫ মাস পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন নজরুলের পরিবার।

এর আগে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেনের মাধ্যমে রাশিয়ায় একটি শপিং মলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির প্রলোভনে তিনি রাশিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান এবং এপ্রিল মাসের শেষের দিক থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। 

এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ৪টি কন্যা সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে এ বছর রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবং দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।  তাছাড়া তার ছোট দুই মেয়ের বয়স মাত্র ৬ ও ৫ বছর।

নিহত নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত থেকে তিনি অবসরে যান। 

জানা গেছে, নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন এবং ২০২০ সালে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার আগে ২০১৩ সালে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন কঙ্গোতে অংশ নিয়েছিলেন।অবসরের পর নিজ এলাকায় বাধাই মালের ব্যবসা শুরু করলেও লোকসানে কারণে আর্থিক সংকটে পড়েন। এসময় স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেনের মাধ্যমে রাশিয়ায় নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির প্রলোভনে তিনি চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় যান। সেখানে পৌছানোর পর নজরুলকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সামরিক প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে পাঠানো হয় ইউক্রেন যুদ্ধে। সবশেষ এপ্রিল মাসের শেষ দিকে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ মেলেনি।

নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে । এখন ছোট ছোট চারটি মেয়ে নিয়ে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। ফেব্রুয়ারিতে সে রাশিয়া যায় এবং ৩০ এপ্রিলের পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। হঠাৎ গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানতে পেরেছি সে মারা গেছে। রাশিয়া যাওয়ার পর জোর করে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল। ওখানে যাওয়ার পর সে আমাকে ফোনে বলেছিল এখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব না। চারটি মেয়েসহ তোমাকে আল্লাহর হাতে তুলে দিলাম, আল্লাহ তোমাকে দেখে রাখবে। ৩০ এপ্রিলই ছিল তার সাথে আমার সব শেষ কথা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী অবসরের পর বাড়িতে থেকে বাধাই মালের ব্যবসা করত। কিন্তু ব্যবসায় সুবিধা করতে পারে নাই। পরে স্থানীয় দালাল ফরিদ মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে রাশিয়ায় একটি তাকে শপিং মলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকুরীর কথা বলে রাশিয়াতে পাঠায়। সেখানে যাওয়ার পর তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এক মাসের সাময়িক প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। পড়ে তাকে রাশিয়ার হয়ে সেনাবাহিনীরা ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষেত্রে পাঠায়। ৩০ এপ্রিল তার ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু জরুরি ডাক পড়ে যাওয়ায় টাকা পাঠাতে পারে নাই। এরপর থেকে তার সাথে আর কোন যোগাযোগ নাই। এখন আমি আমার স্বামীর লাশ একবারের জন্য হলেও দেখতে চাই এবং দেশের মাটিতে  যেন তাকে দাফন করতে পারি। সে ব্যবস্থা করতে সরকারকে অনুরোধ করছি।’

নিহতের ভাই আনোয়ার ফকির বলেন, ‘আমার ভাইকে মিথ্যা কথা বলে রাশিয়াতে নিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল। ওই দেশে যাওয়ার পর এক মাস তার সাথে সবার যোগাযোগ ছিল। এপ্রিল মাসের পর থেকে আর তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নাই। নিখোঁজের আগে সে ফোনে জানিয়েছিল ৮ লক্ষ টাকা দেশে পাঠাবে। কিন্তু যেদিন টাকা পাঠানোর কথা ছিল, ওই দিন থেকেই সে নিখোঁজ হয়। মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি, তারা আমাদেরকে আগামী রোববার যেতে বলেছে। এখন আমরা আমার ভাইয়ের লাশ দেশে চাই। সেই সাথে ওই দেশের রীতিনীতি অনুযায়ী যদি কোন অনুদানের ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেটিও আমরা চাই। কারণ আমার ভাইয়ের ছোট ছোট মেয়ে রয়েছে।’

অভিযুক্ত দালাল ফরিদ হোসেন বলেন, ‘আমি নজরুলকে রাশিয়ায় পাঠাইনি। সে রাশিয়াতে গেছে ‘বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’ নামক একটি এজেন্সির মাধ্যমে। আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। সে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে কাজ করবে বলে জেনে ওখানে গিয়েছেল। এমনকি সে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ এ স্বাক্ষরও করেছে। হঠাৎ গতরাতে শুনছি ওই পরিবারকে মন্ত্রণালয় থেকে  জানিয়েছে সে মারা গেছে। 

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

/এমএইচআর

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক