রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন রাজবাড়ীর নজরুল ইসলাম (৪৭)। দীর্ঘ ৭ মাস নিখোঁজ থাকার পর বুধবার (৮ অক্টোবর) তার মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে নজরুল ইসলাম। চাকরি থেকে অবসরের পর নজরুল ইসলাম রাখি মালের ব্যবসা শুরু করলেও লোকসানের মুখে পড়ে আর্থিক সংকটে পড়েন। পরে স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেনের মাধ্যমে রাশিয়ায় নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির প্রলোভনে তিনি চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশ ছাড়েন। রাশিয়ায় গিয়ে প্রথমে একটি শপিংমলে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজের আশ্বাস পেলেও পরে তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে বাধ্য করা হয় রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে।
পরিবারের সঙ্গে নজরুলের সর্বশেষ কথা হয় ৩০ এপ্রিল। সেদিন তিনি স্ত্রীকে ফোনে বলেন, ‘টাকা পাঠানো হলো না, দ্রুত যেতে হচ্ছে। যদি ফোন বন্ধ পাও, ধরে নিও আমি আর বেঁচে নেই।’ সেটিই ছিল তার জীবনের শেষবার্তা। এরপর থেকে আর কোনও যোগাযোগ হয়নি।
দীর্ঘ সাত মাস ধরে পরিবারের সদস্যরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করলেও কোনও খবর পাননি। অবশেষে বুধবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে জানানো হয়, নজরুল ইসলাম ইউক্রেনের যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী অবসরের পর বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন। আমি নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম, আমরা একসঙ্গে থাকবো। কিন্তু সে বললো, রাশিয়ায় ভালো চাকরি দিয়েছে। এখন সে নেই, আমি চার মেয়েকে নিয়ে কীভাবে বাঁচবো?’
নজরুলের বড় ভাই রহিম বলেন, ‘দালাল ফরিদ আমার ভাইকে প্রলুব্ধ করে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। সরকার যেন অন্তত মরদেহটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে।’
অভিযুক্ত ফরিদ হোসেন দাবি করেন, ‘আমি রাশিয়া পাঠাইনি নজরুলকে। বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে সে গেছে। আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি।’
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নজরুল ইসলাম রেখে গেছেন স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ৬ ও ৫ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ গোটা পরিবার।