দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে সরকার ঘোষিত আশুরার বিল মৎস্য অভয়াশ্রম দখল-দূষণ ও নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষার জন্য মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরি হলেও চলছে মাছ চাষসহ নানা কার্যক্রম। এসব কার্যক্রম বন্ধ করা হলে দেশি মাছের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলায় পাঠানো সম্ভব বলে দাবি স্থানীয়দের। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে দাবি মৎস্য বিভাগের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলার গোপালগঞ্জ ইউনিয়নের ২৩৮ হেক্টর জুড়ে অবস্থিত আশুরার বিল। এই বিলে আগে বাটা, চেলা, তাপসী, তপতী, বাইম, কই, পুঁটি, রুই, চিংড়ি, টাকি, শিং, মাগুর, টেংরা, চোপড়া, পাঙাস, আইড়, কালিবাউশ, বেলে, গুলশা, শোল, মলা, পাবদা, কাতল, ডারকা, ঢেলা, খলিশা, গজার, বোয়ালসহ দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন জেলেসহ স্থানীয় লোকজন। তবে দখল-দূষণ আর অবাধ শিকারের কারণে আগের মতো মাছ মিলছে না বিলে। কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন অবৈধ জাল ব্যবহার করে অবাধে চলছে মাছ শিকার। বিলের পানি শুকিয়ে সেখানে ধান চাষ করা হচ্ছে, আবার পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে মাছ মরে যাচ্ছে। বিল সংস্কার না করায় এর মাটি ভরাট হয়ে আগাছায় ভরে গেছে। এতে আগে দেশি প্রচুর মাছ পাওয়া গেলেও এখন মিলছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘বিলটিতে আগে বড় বড় মাছ পাওয়া যেতো। এখন ধীরে ধীরে বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সংস্কার না করায় পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরায় দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিলটিকে যদি খনন করা হয় তাহলে অভয়াশ্রমটি আগের অবস্থায় ফিরবে। বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, ‘আগে জেলেরাসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন বিলে পানি নেই। মাছও নেই। কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন মাছ মারা জালগুলো ব্যবহারের ফলে পোনা পর্যন্ত মারা যাচ্ছে। যার কারণে বিলে আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।’
বিলে ধান চাষ করা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগে রাবার ড্যামের মাধ্যমে বিলে পানি আটকে রাখা হতো। যার কারণে বিলে ধান চাষ হতো না। এখন আমরা বিলে ধান চাষ করছি। এখানে তো মাছ চাষ করা যাবে না। মাছ চাষ করলে তো আমরা ধান চাষ করতে পারবো না।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হানিফ উদ্দীন বলেন, ‘মৎস্য অভয়াশ্রম রক্ষায় আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে সচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে। এসবের ব্যবহার বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানাসহ নিষিদ্ধ জাল ধ্বংস করা হচ্ছে। সম্প্রতি আবারও বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহারের অভিযোগ আসছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।’