অক্টোবর মাস বিশ্বব্যাপী ‘পিঙ্ক মান্থ’ বা স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসেবে পালিত হয়। এই উপলক্ষে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) যশোরের শার্শা উপজেলা প্রশাসন, শার্শা সরকারি মহিলা কলেজ, আমরা নারী এবং এর সহযোগী সংগঠন ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এর যৌথ উদ্যোগে কলেজ অডিটোরিয়ামে সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ক্যানসার সার্জন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বনি আমিন।
বিশেষ আলোচক ছিলেন শার্শা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নিয়াজ মাখদুম। তিনি বলেন, ‘স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হলো সচেতনতা, সময়মতো পরীক্ষা ও নিজের প্রতি যত্নশীল মনোভাব। প্রতিটি নারী যদি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন, তাহলে শুধু তিনিই নন, তার পরিবার, সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও উপকৃত হবে। সময়মতো সনাক্তকরণ, চিকিৎসা গ্রহণ এবং ইতিবাচক মনোভাবই জীবন রক্ষার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।’
সেমিনারে উপস্থিত অধ্যক্ষ প্রফেসর লায়লা আফরোজা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার এই শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজকে ক্যানসারমুক্ত করতে হলে এই সচেতনতা থেকে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
‘আমরা নারী’-এর নির্বাহী সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নারীর এই উদ্যোগ শুধু একটি সংগঠনের কাজ নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণা। আমরা প্রত্যেকে যদি সচেতনতার দূত হয়ে এগিয়ে আসি, তাহলে ক্যানসারমুক্ত দেশ গড়ে তোলা সম্ভব।’
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী এম এম জাহিদুর রহমান (বিপ্লব) বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্তন ক্যানসার সচেতনতার দূত বা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে গড়ে তোলা— যাতে তারা সমাজে সচেতনতার আলো ছড়িয়ে দিতে পারে।’
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত না হওয়ার কারণে মারা যান। দেশের মোট ক্যানসার রোগীর প্রায় এক-ষষ্ঠাংশই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। নিয়মিত পরীক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই মৃত্যুহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
ডা. বনি আমিন বলেন, ‘সচেতনতা ও প্রাথমিক প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। স্তন ক্যানসার নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক। এটি তখন তৈরি হয়, যখন স্তনের কোষগুলো স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়া হারিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে এবং একসময় টিউমারে রূপ নেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পরিবর্তন চোখে ধরা না পড়লেও সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সহজেই শনাক্ত হয়।’

















