Swadhin News Logo
বুধবার , ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

খুলছে সেন্টমার্টিন, হতাশা কাটেনি ব্যবসায়ীদের

প্রতিবেদক
Nirob
অক্টোবর ২৯, ২০২৫ ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ
খুলছে সেন্টমার্টিন, হতাশা কাটেনি ব্যবসায়ীদের

কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন আগামী সপ্তাহে খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে এতে হতাশা কাটেনি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, পর্যটক সীমিত করা হলে পর্যটন-নির্ভর স্থানীয় অর্থনীতি ও ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে হোটেল-রেস্তোরাঁ, পরিবহন এবং নৌকা চালকদের আয় কমে যাবে, যা তাদের জীবনধারণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং জীবনযাত্রার মান কমবে।

তবে দায়িত্বশীলরা বলছেন, পর্যটক সীমিত করার ফলে দ্বীপের পরিবেশগত সুরক্ষা, যেমন—প্রবাল ও জীববৈচিত্র্যের ওপর চাপ কমবে। পাশাপাশি দ্বীপের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।  

১২টি নির্দেশনা

সেন্টমার্টিনের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত ১২টি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনও নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে। দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।

প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।

পাশাপাশি নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে বলে আশা করছে সরকার।

ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন

তবে পর্যটক সীমিত এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ না করার দাবি জানিয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা উন্নয়ন জোট। তারা বলছেন, এতে হোটেল-রেস্তোরাঁ, পরিবহন এবং নৌকা চালকদের আয় কমে যাবে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত বিধিনিষেধ আরোপ করলে হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকান ও পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কারণ তাদের গ্রাহক সংখ্যা কমে যাবে। জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব পড়বে। পর্যটন-নির্ভর শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের আয় কমে জীবনযাত্রার মান হ্রাস পাবে।
ব্যবসা ও বিনিয়োগের ঝুঁকি বাড়বে। নতুন ব্যবসা শুরু কিংবা পুরোনো ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। পর্যটক কম এলে পর্যটন খাতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে।

সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট সংলগ্ন দোকানি মনজুর আলম (৫০) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে এখানে পর্যটকের ভিড়ে বসার জায়গা থাকতো না। এখন দু’চার ছাড়া কেউ নেই। দুই দশক ধরে শুঁটকি ও চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। এটি আমার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। আগে পর্যটন মৌসুম শুরু হলে দোকানে বেচাকেনা ছিল জমজমাট। সারাদিন পর্যটকে ভরে থাকতো দ্বীপ। এখন দোকানে বসে মাছি মারি। সরকারি বিধিনিষেধে নয় মাস দ্বীপ বন্ধ থাকায় ১১ জনের পরিবারের সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে। এখন শুনছি, আবার নতুন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এখন তো সেন্টমার্টিন এমনিতেই লোকহীন। অনেক দোকানপাট বন্ধ। নতুন নির্দেশনার ফলে পর্যটক আরও কম আসবে। তখন আমাদের কী হবে ভাবছি।’

প্রাণ ফিরেছে দ্বীপের, কমেছে মানুষের জীবিকা

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় দ্বীপে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল সীমিত করাসহ ১৩টি বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২৩ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং টেকসই পর্যটন নীতিমালা ২০২২’ শীর্ষক নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে দিনে ৯০০ পর্যটককে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হবে। আগ্রহীদের মাথাপিছু সরকারকে এক হাজার টাকা করে রাজস্ব দিতে হবে। দ্বীপের হোটেলে রাতযাপন করতে হলে দিতে হবে দুই হাজার টাকা। আগামী পর্যটন মৌসুম অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এই নির্দেশনা কার্যকরের কথা থাকলেও এখন কেউ সেন্টমার্টিন যেতে পারছেন না। 

তারই আলোকে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ নিষিদ্ধ আছে। এ সময়ের মধ্যে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে প্রাণ ফিরেছে। জনমানবশূন্য সৈকতের বালিয়াড়িতে দেখা গেলো লাল কাঁকড়ার ঝাঁক, বেড়েছে শামুক-ঝিনুকের বিচরণ, কেয়াগাছে নতুন পাতা গজিয়েছে। আর নীল পানিতে ফিরে এসেছে সামুদ্রিক কাছিম।

তবে প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেলেও এ সময়ে কর্মহীন ছিলেন দ্বীপের ব্যবসায়ী ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। আগে পর্যটকের কোলাহলে মুখর ছিল যে ঘাট, এখন সেখানে কেবল ঢেউয়ের শব্দ। মাছ ধরার নৌকাও কমে গেছে। বাজার ও দোকানপাটে পণ্য নেই। কাজ নেই মানুষের। জীবিকার খোঁজে অনেকে অন্য কাজ করছেন।

তবে আগামী সপ্তাহে পুনরায় খুলে দেওয়া হচ্ছে সেন্টমার্টিন। এতে পর্যটকরা আবারও দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে এ খবর স্থানীয় লোকজনের মাঝে খুব একটা উৎসাহ নিয়ে আসেনি, যদিও পর্যটন তাদের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস। তাদের জন্য এই মৌসুম ডিসেম্বরের আগে শুরু হয় না।

ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপটি আবার বন্ধ হয়ে যাবে

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সরকার পর্যটকদের ভ্রমণের অনুমতি দিলেও নভেম্বরে কাউকে রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এর মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও রয়েছে। এ ছাড়া এই মৌসুমে দৈনিক দর্শনার্থীর সংখ্যা দুই হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। জাহাজ চলাচলও নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটন বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে টিকিট কিনতে হবে, যা এখনও কার্যকর হয়নি। প্রত্যেক দর্শনার্থীর একটি ভ্রমণ পাস এবং একটি কিউআর কোড বহন করতে হবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পর্যটনের পূর্ণ মৌসুম চলবে। এই সময়ে দ্বীপে রাত্রিযাপনও করা যাবে। ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপটি আবার বন্ধ হয়ে যাবে।

পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যটক সীমিত করায় দ্বীপে বর্জ্য ও দূষণ কিছুটা কমেছে। যা দ্বীপের প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাহায্য করছে। সীমিত পর্যটনের মাধ্যমে পরিবেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমে যাবে, যা দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হবে। পরিবেশ রক্ষা করা গেলে দ্বীপের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে।

হতাশা কাটেনি ব্যবসায়ীদের

সেন্টমার্টিনের ‘ব্লু মেরিন’ রিসোর্টের পরিচালক মো. আলী হায়দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পর্যটকদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল দ্বীপবাসীর জন্য এখন পর্যটনের মূল মৌসুম মাত্র দুই মাস। নভেম্বরে খুললেও ওই সময় পর্যটক থাকে না। মূলত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি পর্যটনের পূর্ণ মৌসুম। সরকার দ্বীপ নিয়ে একেক সময় একেক নির্দেশনা দিচ্ছে। এতে আমরা বিপাকে পড়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বছরের প্রায় ১০ মাস হোটেল-রিসোর্টগুলো ফাঁকা থাকে। এতে করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই দুই-তিন মাসের জন্য হোটেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন টানতে হয়। কীভাবে আমরা তাদের বেতন দেবো? তারা তো অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করবে না। আমাদের টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু নভেম্বরে মৌসুম আসছে জেনে রিসোর্টের বিভিন্ন কক্ষ পরিষ্কার করছি—যতটুকু আয় হয়। এভাবে কতদিন টিকে থাকা যাবে জানি না।’

মারমেইড রিসোর্টের ব্যবস্থাপক তৈয়বুল উল্লাহ বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের কাছ থেকে অনেক ফোনকল পাচ্ছি। তারা জানতে চান, নভেম্বরে এখানে থাকতে পারবেন কিনা। যেহেতু অনুমোদন নেই, তাই আমরা বুকিং নিতে পারছি না। যদি মানুষ থাকতে না পারে, তাহলে এটাকে পর্যটনের মৌসুম বলা যাবে না। ফলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যটন মৌসুম। আমরা নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সংস্কার এবং সাজসজ্জার কাজসহ প্রস্তুতি শুরু করবো। দেখা যাক কী হয়। আসলে এখানকার অনেক পরিবার সম্পূর্ণভাবে পর্যটন মৌসুমের ওপরই জীবন নির্ভর করে। যদি আমরা শুধু ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ব্যবসা চালাই, তাহলে সেই আয় পুরো বছরের জন্য যথেষ্ট হয় না। এতে জীবন খুবই কঠিন হয়ে যাবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার।’

দ্বীপের গ্রিন বিচ রিসোর্টের মালিক মো. সোহেল বলেন, ‘প্রতিদিন মাত্র দুই হাজার পর্যটককে রাত্রিযাপনের অনুমতি দিলে আমার মতো ছোট, স্থানীয় মালিকানাধীন রিসোর্টগুলোর ব্যবসা সীমিত হবে। বেশিরভাগ দর্শনার্থী সমুদ্রসৈকতের কাছে বাইরের বিনিয়োগকারীদের নির্মিত বড় রিসোর্টগুলোতে থাকতে পছন্দ করেন।দ্বীপটিতে প্রায় আট থেকে ১০ হাজার লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য ছোট রিসোর্টগুলোকে সম্ভবত ছাড় দিতে হবে। এর ফলে খরচ মেটানো কঠিন হতে পারে।’

হতাশ পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকরাও

পর্যটন মৌসুমে সাধারণত কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন দ্বীপের মধ্যে প্রায় আট থেকে ১০টি জাহাজ চলাচল করে। এবার কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। আইনগত বিধিনিষেধ থাকায় উখিয়ার ইনানী বিচ থেকে পর্যটনবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ নেই। সোমবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন অধিদফতরকে নীতিগত সম্মতি দিয়ে পাঠানো চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

পর্যটকবাহী জাহাজগুলোর মধ্যে দুটি পরিচালনা করে এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস। জাহাজের পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নভেম্বরের কার্যক্রম নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। যদি কোনও জাহাজ সকাল ৭টায় কক্সবাজার থেকে ছাড়ে, সেটি দ্বীপে পৌঁছায় দুপুর ২টায়। আমাদের জাহাজগুলোর প্রায় সাত ঘণ্টা লাগে। অন্য জাহাজে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে একদিনে গিয়ে আবার ফেরত আসা প্রায় অসম্ভব। রাত্রিযাপনের সুযোগ না থাকায় পর্যটকরাও এত কম সময়ের জন্য যেতে আগ্রহী নন। এটি বাস্তবসম্মতও নয়। আবার পর্যটন বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে টিকিট নেওয়ার বিষয়টি এখনও চালু হয়নি। তাই কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল মৌসুম শুরু হলে কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে চলবে। কারণ তখন পর্যটকরা রাত্রিযাপনের সুযোগ পাবেন।’ 

অন্য নৌযান ও মোটরযান চালকদের মাঝেও হতাশা

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে অর্ধশতাধিক স্পিডবোট ও সার্ভিস বোট চলাচল করে। তবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনও নৌযান চলতে পারবে না। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ সব ধরনের মোটরচালিত যানও নিষিদ্ধ থাকবে।

বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘একটার পর একটা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন অনেকে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। এভাবে চললে আমাদেরও দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে হবে।’

সেন্টমার্টিনে ভাড়ায় চালিত বাইক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জসিম বলেন, ‘আমাদের সমিতির অনেকে বাইক চালিয়ে সংসার চালায়। এখন সেটি বন্ধ। আমাদের পেটে লাঠি মেরেছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।’

সৈকতের কর্মীদের সতর্ক অবস্থান

বিচকর্মী মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘এখন পর্যটক না থাকায় প্রকৃতি তার রূপ ফিরে পেয়েছে। তবে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আসছে মৌসুমে অনেকে আবার ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করছেন। এবার সৈকতে আলো, শব্দ বা বারবিকিউ পার্টি বন্ধ থাকবে। শামুক-ঝিনুক ও কাছিম সংরক্ষণে আমরা সতর্ক থাকবো।’

জেটি সংস্কারকাজ থেমে গেছে

নভেম্বরে পর্যটক আগমনের কথা থাকলেও সেন্টমার্টিন জেটির সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে পর্যটকবাহী জাহাজ ঘাটে ভিড়তে পারবে না—এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস. এস. রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রতিনিধি মো. আলী হায়দার বলেন, ‘সাত কোটি টাকার প্রকল্পে ৭০টি পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ। রোলিং ও সিঁড়ির কাজ বাকি আছে। মালামাল আনার কাজ চলছে। চেষ্টা করছি মৌসুম শুরুর আগেই কাজ শেষ করতে। আশা করছি, শেষ করতে পারবো।’

জীবনধারণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে

দ্বীপের মানুষের জীবনধারণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বলে জানালেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়জুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হয়, সেন্টমার্টিন আলাদা একটা স্থান। প্রতিদিন নতুন নতুন আইন। চেয়ারম্যান হয়েও আমাকে দ্বীপে ঢোকার সময় একাধিকবার আইডি কার্ড দেখাতে হয়—এর চেয়ে অপমানজনক আর কী হতে পারে। সরকার দ্বীপের মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে টানাটানি করছে। বিকল্প আয়ের পথ না খুলে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা এখানের মানুষকে না খেয়ে মারার মতো।’

সেন্টমার্টিন রক্ষায় এর বিকল্প নেই

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিন রক্ষায় আসলে এর বিকল্প নেই। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকা উচিত। দ্বীপে পর্যটক পরিবহনের জন্য নৌযানগুলোকে অনুমতি নিতে হবে। মোটরযান নিষিদ্ধ রাখাসহ নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়নে নজরদারি থাকবে। তবে স্থানীয়দের জন্য অনুমতির দরকার নেই। চেয়ারম্যানকেও কেন আইডি কার্ড দেখাতে হয়েছে—বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’

কক্সবাজারের মো. আ: মান্নান বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই কাজগুলো করতে হবে। এতে দ্বীটি বাঁচবে। আর জেটির সংস্কারকাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক

আপনার জন্য নির্বাচিত
বাকৃবিতে ৫৯ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাকৃবিতে ৫৯ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নেপথ্যে যা ঘটেছিল

যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নেপথ্যে যা ঘটেছিল

মুন্সীগঞ্জে নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে কমপক্ষে তিন জনের মৃত্যু

মুন্সীগঞ্জে নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে কমপক্ষে তিন জনের মৃত্যু

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন

শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্থপতি, তবে শেখ পরিবারের সবাই চোর-ডাকাত: শামীম সাঈদী

শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্থপতি, তবে শেখ পরিবারের সবাই চোর-ডাকাত: শামীম সাঈদী

আশুলিয়ায় প্রসূতি শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ

আশুলিয়ায় প্রসূতি শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ

পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৫ জনকে পুশ ইন 

পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৫ জনকে পুশ ইন 

টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা পাচারে জড়িত চক্রের ৫ সদস্য আটক

টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা পাচারে জড়িত চক্রের ৫ সদস্য আটক

হাতকড়াসহ আ.লীগ নেতা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এসআই প্রত্যাহার, তদন্তে কমিটি

হাতকড়াসহ আ.লীগ নেতা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এসআই প্রত্যাহার, তদন্তে কমিটি

ইয়েমেন উপকূলে নৌকাডুবি, অন্তত ৬৮ শরণার্থী ও অভিবাসীর মৃত্যু

ইয়েমেন উপকূলে নৌকাডুবি, অন্তত ৬৮ শরণার্থী ও অভিবাসীর মৃত্যু