রাঙামাটির রাজবন বিহারে লাখো পুণ্যার্থীর অংশগ্রহণে শেষ হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজবন বিহারের মাঠে ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসবে বনভান্তের স্মৃতির উদ্দেশে চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ধর্মদেশনায় পাঠ করেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালঙ্কার মহাথের। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- রাউজান পাহাড়তলী মহামনি বৌদ্ধ বিহারে বিহার প্রধান উপসংঘরাজ ধর্মপ্রিয় মহাথের, সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক দীপেন দেওয়ান প্রমুখ।
রাজ বনবিহারের পক্ষ থেকে ভিক্ষু সংঘের হাতে চীবর তুলে দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে চীবর তুলে দেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক দীপেন দেওয়ান।
অনুষ্ঠানে রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালঙ্কার মহাথের বলেন, পৃথিবী থেকে দুঃখ, গ্লানিবোধ মুছে ফেলার মাধ্যমে মানব হিতার্থে জীবনযাপন করতে হবে। একে অন্যকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। জীবকে ভালোবাসতে হবে। তবেই ভগবান বুদ্ধের দর্শন লাভ সহজ হবে।
দানোৎসবে অংশ নেওয়া পুণ্যার্থী শোভা মায়া চাকমা বলেন, আমরা যত দান করি, তার মধ্যে বেশি পুণ্যের দান হলো এটি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে চীবর বানিয়ে দান করা হয়। তাই সব দানের উত্তম দান বলা হয় চীবর দান।
রাঙামাটি রাজ বনবিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিও খীসা বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে বেইনঘর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। আজ এর শেষ দিন। সারা বছর পুণ্যার্থীরা দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। এই দানোৎসবকে কেন্দ্র করে প্রায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর আগমন হয়েছে। দেশের বাইরে থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছে এই দানোৎসবে।
উল্লেখ্য, গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় মহাউপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা এবং সুতা রঙ করে কাপড় বুনে তা সেলাই করে চীবর (ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দান করে এই কঠিন চীবর দানের সূচনা করেন প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। এই পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক, বাচনিক মানসিকভাবে অধিক পরিশ্রম হয় এবং অধিকতর পুণ্য লাভ হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে) রাঙামাটির জেলার লংগদু তিনটিলা বন বিহারের ১৯৭৪ সালে কঠিন চীবর দানোৎসবের পুনর্প্রবর্তন করান।

















