খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় খুলনা বারের আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে রবিবার (২ নভেম্বর) বিকালে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলের প্রার্থীরা খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘বিএনপিপন্থি অ্যাডহক কমিটি বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকতে চায়।’ সোমবারের (৩ নভেম্বর) মধ্যে ঘোষিত তফসিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে বিকাল ৩টার পর নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করবেন বলে আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।
প্রেসক্লাবে বিকাল সাড়ে ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল মনোনীত অ্যাডভোকেট মো. আবুল খায়ের ও অ্যাডভোকেট শেখ জাকিরুল ইসলাম পরিষদ। এরপর বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র আইনজীবীদের প্যানেল আক্তার জাহান রুকু ও নিহিত কান্তি ঘোষ পরিষদের প্রার্থীরা।
উভয় পরিষদের প্রার্থীদের অভিযোগ, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সমিতির সাবেক সভাপতি খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম পরিষদের সব সদস্য পালিয়ে যান। ৬ আগস্ট বিএনপিপন্থি আইনজীবী আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চুকে আহ্বায়ক ও নুরুল হাসান রুবাকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন হয়। প্রতি বছরের ৩০ নভেম্বর সমিতির বার্ষিক নির্বাচন ও নতুন বছরের প্রথম দিন দায়িত্ব গ্রহণের প্রথা আছে। কিন্তু অ্যাডহক কমিটি নানা অজুহাতে ২০২৪ সালে নির্বাচন না দিয়ে সাধারণ সভায় তাদের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয়। ২০২৬ সালের নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা হয়। মনোনয়নপত্র বিক্রির নির্ধারিত দিন ৩০ অক্টোবর কোনও মনোনয়নপত্র তারা বিক্রি করেননি। তখন বলা হয়, ক্লারিক্যাল মিসটেকের জন্য ফরম বিতরণ করা যাচ্ছে না। ২ নভেম্বর পাওয়া যাবে। কিন্তু এদিন সকাল থেকে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এরই মধ্যে অ্যাডহক কমিটি দুপুর ২টায় সমিতি ভবনের ১ নম্বর হলরুমে একটি জরুরি সভা দেখিয়ে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। তারাই সমিতির কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি ভরাডুবি আঁচ করতে পেরে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ভোট বানচাল করেছে। আমরা সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে সময় দিলাম। তারা ঘোষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে আইনজীবীদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ জাকিরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম পান্না, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম লিটন, অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান ও অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী প্রমুখ।
অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম নির্বাচন দিয়ে ভোট কারচুপি করতো। ক্ষমতার দখল নিতো। কিন্তু আজ বিএনপি ভোট না দিয়েই ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর অর্থ, এর আগে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বলে আশা করছে। এরপর তারা ভোট ছাড়াই বারের দখল নিয়ে আয়ের কোটি কোটি টাকা লোপাট করবে। সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলাম। এরপর আমরা নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা এবং ইসি কমিটির রুমে তালা মারতে বাধ্য হবো।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিহিত কান্তি ঘোষ, অ্যাডভোকেট এ এম মমিনুজ্জামান (টুলু), অ্যাডভোকেট সাবিত্রি চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট এস এম মাসুদুর রহমান, অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান শান্ত ও অ্যাডভোকেট মো. মহসিন প্রমুখ।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্ত অ্যাডহক কমিটি সাধারণ সভার সিদ্ধান্তে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আমরা।’
বিএনপিপন্থি খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সদস্যসচিব নুরুল হাসান রুবা বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর আমাদের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সমিতির সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, ভোটের পরে পলাতক সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর চার্জশিট ও বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকে ভোটে জেতার জন্য সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছেন। এজন্য সাধারণ সদস্যরা সভা ডাকার জন্য চিঠি দেন আমাদের। সেই সভায় সর্বসম্মতিতে নির্বাচন কিছু দিনের জন্য পেছানো হয়েছে।’
















