ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় কিশোরীকে (১৬) যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে (৭৬) গাছে বেঁধে জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতনের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবার করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার (০৫ নভেম্বর) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পাগলা থানার মশাখালী ইউনিয়নে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে জুতার মালা পরানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তা নিয়ে সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির সামনে একই এলাকার এক বিএনপি কর্মীর নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটেছে। ওই বিএনপি কর্মীর মেয়েকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পুলিশ ও মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী কিশোরী ও অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবেশী। মেয়েটি এবার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ওই কিশোরীকে বাড়িতে একা পেয়ে যৌন নির্যাতন করেন। এ সময় মেয়েটি চিৎকার শুরু করে। তখন বাড়িতে এক ভিক্ষুক এসে ঘটনা দেখে চিৎকার শুরু করেন। এরপর আশপাশের লোকজন গিয়ে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে পুলিশকে খবর দেন। এর আগেও তিনি হাসি-তামাশার অজুহাতে ওই কিশোরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা এক বৃদ্ধের দুই হাত পেছন দিকে নিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা। কয়েকজন ব্যক্তি তাকে ঘিরে আছেন। একজন একটি জুতার মালা পরিয়ে দেন বৃদ্ধের গলায়। এ সময় বৃদ্ধকে নিশ্চুপ দেখা যায়।
এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে গতকাল রাতে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে অভিযোগটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে পুলিশ।
গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, ‘কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের মামলায় ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
ওসি বলেন, ‘জুতার মালা পরানোর বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছিল। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছেন।’
এদিকে, এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাসহ মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ময়মনসিংহের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক বিমল পাল বলেন, ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে অপমান করার ঘটনা সারা দেশেই ঘটছে। মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের পর গাছে বেঁধে গলায় জুতার মালা পরানো বর্বরোচিত ঘটনা। একজন মুক্তিযোদ্ধা অন্যায় করলে দেশে আইন আছে, বিচার ব্যবস্থা আছে। আইন তার বিচার করবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা করিম মিলিটারিকে একজন বিএনপি কর্মী যেভাবে অপমান অপদস্থ করেছেন, তা কোনোভাবেই মানা যায় না। এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো ঘটনা সম্পূর্ণভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। কেউ যদি অপরাধ করে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে। এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সেজন্য পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে প্রত্যাশা করছি। না হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হবে।’

















