কক্সবাজারের টেকনাফের একটি ব্রিজের নিচ থেকে মোহাম্মদ ইউনুস সিকদার (৪৫) নামে সাবেক এক ইউপি সদস্যের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (০৫ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার ব্রিজের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এটিকে হত্যাকাণ্ড বলছে পুলিশ। ইয়াবা ব্যবসার লেনদেনের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা।
নিহত ইউনুস সিকদার উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দলীপাড়ার মৃত মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে। তিনি সাবরাং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদ টেকনাফ উপজেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তার লাশ পাওয়া যায়।
নিহতের পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার রাতে আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম শফুর মিয়ার বাড়িতে ইউনুসকে দাওয়াত দিয়ে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে গেলে আটকে রাখা হয়। এরপর পরিবারের কাছে ৭০ লাখ টাকা দাবি করেন শফুর মিয়া। টাকা দিলে সকালে জীবিত ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু সকালে ব্রিজের নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় লাশ পাওয়া যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলম শফুর মিয়ার বাড়িতে ইউনুস সিকদারকে ডেকে নেওয়া হয়। বুধবার সকাল ৮টার দিকে রঙ্গিখালীর ব্রিজের নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
ইউনুসের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমার স্বামীকে দাওয়াতের কথা বলে বাড়িতে ডেকে নেন শফুর মিয়া। সেখানে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন শফুর ও তার লোকজন। শফুরের সঙ্গে কোনও লেনদেন ছিল না তার। মুক্তিপণ হিসেবে ৭০ লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা দিলে সকালে জীবিত ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন। সকালে পেলাম লাশ। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি বিচার চাই। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করবো। শফুরের সঙ্গে ঘটনায় অনেকে জড়িত।’
নিহতের বড় ছেলে মোহাম্মদ ফারদিন বলেন, ‘দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে ডেকে বাবাকে আটকে রাখা হয়। এরপর ৭০ লাখ টাকা দাবি করেন শফুর মিয়া ও তার লোকজন। টাকা দিলে জীবিত ফেরত দেবে বলেছিল। রাতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শফুর বাড়িতে গেলে তার লোকজন গুলি ছুড়লে পুলিশ চলে আসে। সকালে লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় আরও লোকজন জড়িত রয়েছেন। বাবাকে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি চাই আমি।’
এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে টেকনাফ পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের সভাপতি ইউনুস সিকদারকে মঙ্গলবার রাতে কমিটির বিষয়ে কথা হবে বলে রঙ্গিখালীর শফুর মিয়ার বাড়িতে ডাকা হয়। সেখানে হত্যা করে লাশ ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়। তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের কাছে ৭০ লাখ টাকা দাবি করেছিল শফুর মিয়া ও তার লোকজন। ঘটনার পর থেকেই শফুর মিয়া পলাতক। তাকে গ্রেফতার করলে আসল ঘটনা জানা যাবে।’
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউনুস সিকদার নিয়মিত শফুর মিয়ার বাড়িতে যেতেন। সম্প্রতি ইয়াবা ব্যবসার পাওনা টাকা নিয়ে শফুর মিয়া, তার সহযোগী আবছার উদ্দিন, আনোয়ার হোসাইন ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দেয়। মঙ্গলবার রাতে বিরোধ মেটানোর কথা বলে দাওয়াত দিয়ে শফুর মিয়া তাকে বাড়িতে ডেকে নেন। সেখানে ব্যাপক মারধর করা হয়। এতে মৃত্যু হলে লাশ বাড়ির পাশে ব্রিজের নিচে ফেলে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যান শফুর মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জানান, ইয়াবা বিক্রির ৯০ লাখ টাকা লেনদেন নিয়ে ইউনুস সিকদারের সঙ্গে স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে বিরোধ চলছিল। টাকার জন্য রাতে ইউনুস সিকদার সাবরাং এলাকা থেকে রঙ্গিখালীতে গিয়েছিলেন। এরপর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে শফুর মিয়াকে একাধিকবার কল দিয়ে মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশী ও স্থানীয় লোকজন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’

















