রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনের (১৬) মৃত্যু হয়েছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে। ধারালো ও চোখা অস্ত্রের আঘাতে তার শরীরের তিনটি স্থানে রক্তনালি কেটে গিয়েছিল। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও হয়েছিল।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকাল পৌনে ১০টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত শুরু হয়। ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন ও একই বিভাগের প্রভাষক শারমিন সোবহান কাবেরী। ময়নাতদন্ত করতে প্রায় ৩০ মিনিট লাগে।
এ সময় বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাওসিফের বাবা বিচারক আব্দুর রহমান। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কফিল উদ্দিন বেরিয়ে এসে তার সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়া পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন।
কফিল উদ্দিন জানান, তাওসিফের ডান ঊরু, ডান পা ও বাঁ বাহুতে ধারালো ও চোখা অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। এ তিনটি জায়গায় রক্তনালি আছে। সেগুলো কেটে গিয়েছিল। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও ছিল শরীরে। তারা মনে করছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে তাওসিফের গলায় কালশিরা দাগ আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, নরম কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধের কারণে দাগটি হতে পারে। তবে এটি মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা একই সময়ে হয়েছে বলেও জানান চিকিৎসক।
ময়নাতদন্ত শেষে মর্গের ভেতরে ঢুকে ছেলের মরদেহ একনজর দেখতে যান তার বাবা বিচারক আবদুর রহমান। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সুমনের মরদেহ গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার চকপাড়া গ্রামে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রামেক হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে রওনা দেন স্বজনরা।
এর আগে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রাজশাহী সেন্টারের সদস্যরা রামেক হাসপাতালের নির্ধারিত কক্ষে মরদেহের গোসল করিয়ে দেন। পরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সেই মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রাজশাহী সেন্টারের পরিচালক কায়সার পারভেজ মেহেদী জানান, অনেক দূরের পথে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। তাই ময়নাতদন্তের পরই তারা মরদেহের গোসল করিয়ে দিয়েছেন। পরে তাদের ফ্রিজিং গাড়িতেই মরদেহ পাঠানো হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকালে রাজশাহী নগরীর ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় হত্যার শিকার হয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাওসিফ। হামলাকারী গাইবান্ধার ফুলছড়ির লিমন মিয়া (৩৫) তাদের পূর্ব পরিচিত। হামলায় যখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাওসিফের মা তাসমিন নাহার লুসী (৪৪)।
এ ছাড়া ধস্তাধস্তিতে হামলাকারী নিজেও আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত থানায় কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি।
আরও খবর: হুমকির ১০ দিনের মাথায় বিচারকের ছেলেকে হত্যা, স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম

















