চট্টগ্রামে ভূমিকম্পে ৬ তলা একটি ভবন পাশের ভবনের দিকে হেলে পড়েছে। নগরের ডবলমুরিং থানাধীন মনসুরাবাদ মিয়াবাড়ি সড়কের ওই ভবনটি সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলমের মালিকানাধীন। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ভবনটি হেলে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস। এ ছাড়া ভৌগলিক অবস্থানের কারণেও চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে বন্দরনগরীতে অসংখ্য বহুতল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বন্দরনগরীর ৭০ শতাংশ বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম নগরে থাকা তিন লাখ ৮২ হাজার ভবনের মধ্যে দুই লাখ ৬৭ হাজার ভবন কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগে সওদাগর ভিলা নামে পাঁচতলা একটি ভবন ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ২৩ জন নিহত হন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) তথ্যমতে, ৬০ বর্গমাইলের এ নগরীতে বর্তমানে তিন লাখ ৮২ হাজার ১১১টি ভবন আছে। এর মধ্যে একতলা ভবন আছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ৫টি এবং দুই থেকে পাঁচতলা ভবন আছে ৯০ হাজার ৪৪৪টি। ৬ থেকে ১০ তলা পর্যন্ত ভবন আছে ১৩ হাজার ১৩৫টি। ১০ তলার ওপরে ভবন আছে ৫২৭টি। নগরে এখন ২০ তলার বেশি ভবন ১০টি। এত উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা হলেও অধিকাংশই মানেনি ইমারত বিধিমালা। সম্প্রতি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৯৪টি ভবন সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নিতে চসিকে তালিকা পাঠায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। চসিক এখনও এসব ভবনের বিরুদ্ধে কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস্ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ছয় থেকে সাত মাত্রা আকারের ভূমিকম্প হলে ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই বিপর্যয় মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। এখানে অসংখ্য বহুতল ভবন আছে। সে সঙ্গে আছে অনেক পুরাতন ভবন। তার মধ্যে আবার অনেকগুলো ভবন আছে যেগুলো নিয়ম না মেনে করা হয়েছে। যে কারণে ৬-৭ মাত্রার ভূমিকম্প অবশ্যই চট্টগ্রামের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ জন্য এখন থেকেই সতর্কতা প্রয়োজন।’
প্ল্যানার্স ফোরাম ফর চিটাগংয়ের সদস্য ও নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে যে পরিমাণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে। একটি ভবন হেলে পড়েছে। ৬-৭ মাত্রার ভূমিকম্প নয়, শুক্রবার যে ভূমিকম্প হয়েছে সেটা যদি আরও ১০-২০ সেকেন্ড স্থায়ী থাকতো তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যেত। তখন শুধু যে ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হতো তা নয়, মানুষও হতাহত হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবন নির্মাণের আগে সয়েল টেস্ট করতে হয়। সয়েল টেস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতে ভবনের ডিজাইন করা হয়। ভবনের ফাউন্ডেশন যদি দুর্বল হয়, খারাপ সয়েলের ওপর ভবন হয় তাহলে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে নগরীতে কতটি ভবনের ফাউন্ডেশন দুর্বল বিষয়টি সিডিএ বলতে পারবে। কেননা সিডিএ চট্টগ্রাম নগরীতে ভবনের নকশার অনুমোদন দিয়ে থাকে।’
এ প্রসঙ্গে স্থপতি আশিক ইমরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে ৬০ শতাংশের মতো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ পুরাতন যেসব ভবন রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে গড়ে উঠেনি। যেগুলোর ফাউন্ডেশন এত বেশি শক্তিশালী নয়, সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে নগরের ওয়ার্ডভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার পর যেগুলোর শক্তি বৃদ্ধি করা যায় সেগুলোতে শক্তি বৃদ্ধি করা এবং যেগুলো ভাঙার প্রয়োজন সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।’
















