লাঞ্চে স্বামীর বাবা-মা-খালাকে বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে গরুর মাংসের ওয়েলিংটন খাইয়ে হত্যা এবং এক অতিথিকে হত্যার চেষ্টার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান নারী এরিন প্যাটারসন।
ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মোরওয়েল শহরে অনুষ্ঠিত এই বিচারকার্যে প্রমাণে উঠে আসে—প্যাটারসন আশেপাশের এলাকা থেকে মারাত্মক বিষাক্ত ‘ডেথ ক্যাপ’ মাশরুম সংগ্রহ করেছিলেন এবং পরে পুলিশকে মিথ্যা বলে ও প্রমাণ নষ্ট করে অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন।
তার আইনি দল দাবি করেছিল যে তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে বিষাক্ত মাশরুম সংগ্রহ করেছিলেন এবং প্রিয়জনদের অসুস্থ দেখে ‘আতঙ্কিত’ হয়ে মিথ্যা বলেছিলেন।
তবে সোমবার (৭ জুলাই) আদালতে জুরি রায় দেয় যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করেছেন। ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই সেই ভোজনের কয়েক দিন পর হাসপাতালে মারা যান প্যাটারসনের সাবেক শ্বশুর-শাশুড়ি ডন প্যাটারসন (৭০) ও গেইল প্যাটারসন (৭০), এবং গেইলের বোন হিদার উইলকিনসন (৬৬)। স্থানীয় পাদ্রি ইয়ান উইলকিনসন (হিদারের স্বামী) কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসার পর বেঁচে যান।
প্যাটারসনের প্রাক্তন স্বামী সাইমন প্যাটারসনও ওই দুপুরের খাবারে আমন্ত্রিত ছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আসেননি। তাকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগও ছিল, তবে বিচারের আগেই তা প্রত্যাহার করা হয়। এই মামলা অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত বিচারগুলোর একটি হয়ে উঠেছিল।
৯ সপ্তাহ ধরে ভিক্টোরিয়ার সুপ্রিম কোর্টে ৫০টির বেশি সাক্ষীর জবানবন্দি শোনা হয়, যার মধ্যে প্যাটারসন নিজেও ছিলেন।
পুলিশ জানায়, তারা তার বাড়ির আবর্জনা থেকে বিষাক্ত অবশিষ্ট খাবার উদ্ধার করেছিল। চিকিৎসকরা ধীরে ধীরে মৃত্যুর বিবরণ দেন।
এই মামলার একমাত্র অনুপস্থিত জিনিস ছিল মোটিভ—যা প্যাটারসনের পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অভিযুক্ত দাবি করেন, প্যাটারসন ক্যান্সারের মিথ্যা কারণ দেখিয়ে অতিথিদের বাড়িতে ডেকেছিলেন, তাদের বিষ দিয়েছিলেন এবং সন্দেহ এড়াতে নিজেও অসুস্থতার ভান করেছিলেন। তিনি পুলিশ ও চিকিৎসকদের কাছে মাশরুম সংগ্রহ, খাবার শুকানোর যন্ত্র ফেলে দেয়া এবং মোবাইল ফোনের ডেটা মুছে ফেলার কথা মিথ্যা বলেছিলেন—যা তার অপরাধের প্রমাণ বলে উল্লেখ করা হয়।
কোর্টে প্যাটারসন দাবি করেন, তিনি তার আত্মীয়দের ভালোবাসতেন এবং তাদের ক্ষতি করার কোনো কারণ ছিল না। তিনি বারবার বলেন যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে খাবারে মাশরুম দেননি এবং দোকানের মাশরুমের পাশে রাখা শুকনো বুনো মাশরুম দুর্ঘটনাবশত খাবারে চলে গিয়েছিল।
সপ্তাহখানেকের বিচার-বিবেচনার পর জুরি তাকে চারটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে, যার ফলে তিনি আজীবন কারাবাসের মুখোমুখি হতে পারেন। আদালতে প্যাটারসন ও উইলকিনসন পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না এবং তারা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি নিউজ।
/এআই