চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল আলোচিত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় অপারেটর পরিবর্তনের পর থেকে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। গত ১৭ বছর ধরে এনসিটি পরিচালনা করে আসছিল দেশীয় বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের করা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ৬ জুলাই। ৭ জুলাই থেকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পায় নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড (সিডিডিএল)।
এনসিটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে আলোচনা চলে আসছিল। বর্তমান সরকার এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে গেলে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ওঠে। এ অবস্থায় ড্রাইডক লিমিটেডকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সিডিডিএল সূত্র জানিয়েছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৭ জুলাই এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় সিডিডিএল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সিডিডিএল টার্মিনালটির কার্যক্রমে শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করেছে। ৭ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত দৈনিক গড়ে তিন হাজার ২৫০ টিইইউএস (বিশ ফুট সমতুল্য ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর আগে ১৯ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত গড়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল দুই হাজার ৮৪৫ টিইইউএস। আগের তুলনায় সিডিডিএল দায়িত্ব নেওয়ার পর দৈনিক ৪০৫ টিইইউএস বা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। এ সময়ে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড মোট ৩০টি জাহাজের কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিং সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে এনসিটির ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর জেটিতে একযোগে চারটি জাহাজে পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম চলমান আছে।
২৫ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনাল পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি অপারেটর প্রতিষ্ঠান ছাড়া বন্দর চলবে না, এমন প্রচারণা চালিয়ে গত ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক এনসিটি টার্মিনালটি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে রাখা হয়েছিল। গত ১৭ দিনে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ৭ জুলাই থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম ড্রাইডক পরিচালনা করছে এনসিটিকে। ১৭ দিনে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমেছে ১০ ঘণ্টা। এটি বড় ধরনের একটি অর্জন।’
নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের নোটিশে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটির দায়িত্ব বুঝে নিতে হয়েছে নৌবাহিনীকে। তাই শুরুকে ছোট বড় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। দিন দিন অপারেশন আরও সহজ হচ্ছে। খুব শিগগিরই বন্দর অপারেশনের কাজ আরও গতিশীল হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড নেওয়ার পর থেকে কনটেইনার পরিবহনে গতি বেড়েছে। দৈনিক সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। এটা কিন্তু অনেক বড় বিষয়। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে ড্রাই ডক লিমিটেড আরও ভালো করবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বন্দরে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল রয়েছে। সেগুলো হলো- চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। এর মধ্যে এনসিটি সবচেয়ে আধুনিক ও বৃহৎ। দৈর্ঘ্যে ৯৫০ মিটার বিশিষ্ট্য এই টার্মিনালে একসঙ্গে চারটি বড় কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যায়। রয়েছে বিশ্বমানের গ্যান্ট্রি ক্রেন।
২০০৭ সাল থেকে আংশিক এবং ২০১৫ সাল থেকে পূর্ণমাত্রায় এনসিটি পরিচালনা করে আসছিল সাইফ পাওয়ার টেক। একইভাবে চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালও (সিসিটি) পরিচালনা করছে সাইফ পাওয়ার টেক। এ ছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) পরিচালনা করছে বন্দর নিজেই এবং পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনা করছে সৌদি আরব ভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটিই)। ২০২৪ সালের জুন থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি পিসিটি পরিচালনা করছে। চুক্তি অনুযায়ী নিজস্ব সরঞ্জাম দিয়ে ২২ বছর পিসিটি পরিচালনা করবে সৌদি আরবের কোম্পনিটি।

















