বিভিন্ন মামলায় টানা ২৬ বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ৬০ বছর বয়সী নাছির উদ্দিন চৌধুরী ওরফে ‘শিবির নাছির’। গত বৃহস্পতিবার কুলসুমা বেগমকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাছিরের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা।
হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনী এলাকার এলাহী বক্সের ছেলে নাছির উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে জোড়া খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও অস্ত্র আইনের মামলা ছিল ৩৬টি। একে একে খালাস পান ৩১টি মামলায়। দুটিতে সাজা হলেও আগে কারাভোগে শেষ হয়ে যায়। আছে আর তিনটি মামলা। এর মধ্যে দুটি মামলায় আগে থেকে জামিনে ছিলেন। শেষ মামলায় গত বছরের ১১ আগস্ট জামিন হওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। র্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত নাছির একসময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ‘শিবির নাছির’ নামের পরিচিত হয়ে ওঠেন। তবে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নেতারা।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ৯ এপ্রিল থেকে কারাগারে ছিলেন নাছির। দীর্ঘ ২৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পান। বর্তমানে ফটিকছড়ির তিনটি হত্যা মামলা বিচারাধীন।
আদালত সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাসে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় রায় হয়। এতে তার পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালে অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন হত্যা মামলায় খালাস পান। ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর জমিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরি ও হাটহাজারীর তিন খুনের মামলায় খালাস পান নাছির। ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রামের জামাল খান রোডে অধ্যক্ষ মুহুরির বাসায় ঢুকে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে। এভাবে ৩১টি মামলায় খালাস পান নাছির। নাছিরের আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনসারী দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে নাছিরকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই খালাস পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৮ সালের ৯ এপ্রলি থেকে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত টানা কারাগারে ছিলেন। গত বছরের ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।
নাছিরের বড় বোন লিলি আক্তার জানিয়েছেন, হাটহাজারীর ছিপাতলী গ্রামের কুলসুমা বেগমের সঙ্গে তার ভাই নাছিরের বিয়ে হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এতে ১৫ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। এখন তার ভাই সংসারী হয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে চান। এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন লিলি আক্তার।
বিয়ের বিষয়ে নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিবাহিত জীবন যাতে সুখের হয়, সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাই। এখন থেকে ব্যবসা করে সৎপথে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে চাই আমি।’
‘সন্ত্রাসী’ নাছির উদ্দিন ছাত্রশিবিরের সঙ্গে কখনও জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরের (উত্তর) সভাপতি তানজীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘লোকজনের মুখে মুখে নাছিরের নামের সঙ্গে শিবির কথাটি জুড়ে যায়। তিনি হয়তো শিবিরের ভালো কাজকে সমর্থন করতেন। কিন্তু তিনি কখনও শিবিরের কোনও কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এমনকি দলের কোনও পদেও ছিলেন না।’

















