সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে পাথর লুটের ঘটনায় অভিযানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিম। রাষ্ট্রীয় পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন ও লুটের অভিযোগে বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে এ অভিযান পরিচালিত হয়। বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুদকের পাঁচ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দোষীদের শনাক্তের কাজ শুরু করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাৎ।
দুদক জানিয়েছে, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে কয়েকশ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদ তথা পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। প্রাথমিকভাবে তারা এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। এ লুটপাটে কারা সম্পৃক্ত ছিলেন, সেটাও শনাক্ত করার কাজ করছেন তারা। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন প্রতিনিধিদল।
দুদক সূত্র জানায়, কারা এ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, তা অনুসন্ধানেই তাদের এ পরিদর্শন। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে এমন লুটপাট হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণও অনুসন্ধান করছেন। ঘটনাস্থলে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন সেবা চালু আছে। নদীর তীরেই বিজিবি ক্যাম্প এবং বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। বছরখানেক সময় ধরে প্রশাসনের সামনে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ইন্ধন ও সরাসরি সম্পৃক্ততায় পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাথর চুরির প্রক্রিয়াটি প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। সেই পাথর স্থানীয় পাথর ভাঙার যন্ত্রে ভাঙা হয়েছে, যাতে চুরি করা পাথরের অস্তিত্ব না পাওয়া যায়।
দুদকের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাৎ বলেন, ‘সাদাপাথর লুটপাটে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রভাবশালী লোক, পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জড়িত ছিলেন। তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো নিষ্ক্রিয় ছিল বা বাধা দেয়নি। এ কারণে এ লুটপাট ঠেকানো যায়নি।’
দুদকের সহকারী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘পাথর লুটের সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন এই লুটের সঙ্গে কারা জড়িত, প্রশাসন কেন নীরব ছিল, প্রশাসনের যোগসাজেশ আছে কিনা এবং লুট করা পাথর কোথায় নেওয়া হয়েছে, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সবকিছু নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, ‘নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। অভিযানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সহায়তা করছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় যতটুকু পর্যন্ত সেনাবাহিনী যেতে পারে, তারা ততটুকু পর্যন্ত গেছে।’