নিজস্ব প্রতিবেদক
দুধ মানুষের অন্যতম প্রধান পুষ্টি উপাদান। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার জন্য দুধ প্রয়োজনীয় খাদ্য। এতে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে, যা শরীরের বৃদ্ধি ও সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে প্রতিদিন দুধের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। তবে দেশীয় জাতের গরু তুলনামূলকভাবে কম দুধ দেয়, যার কারণে খামারিরা বেশি দুধ উৎপাদনকারী উন্নত জাতের গরু পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু বিদেশি এবং দেশি-বিদেশি সংকর জাত দুধ উৎপাদনে সবচেয়ে কার্যকর ও লাভজনক।
ফ্রিজিয়ান (Holstein Friesian)
ফ্রিজিয়ান জাতের গরু বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী জাত হিসেবে পরিচিত। এরা মূলত নেদারল্যান্ডসের জাত হলেও এখন বাংলাদেশেও খামারিরা ব্যাপকভাবে পালন করছেন। একটি পূর্ণবয়স্ক ফ্রিজিয়ান গাভী প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লিটার দুধ দিতে সক্ষম। সঠিক খাদ্য ও যত্ন পেলে উৎপাদন আরও বাড়তে পারে।
জার্সি (Jersey)
জার্সি জাতের গরু আকারে ছোট হলেও দুধের মান ও ঘনত্বের জন্য জনপ্রিয়। এই গরুর দুধে ফ্যাটের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে, যা ঘি, মাখন ও দই তৈরির জন্য বিশেষ উপযোগী। একটি জার্সি গাভী প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ লিটার দুধ উৎপাদন করতে পারে।
শাহীওয়াল (Sahiwal)
শাহীওয়াল মূলত ভারত ও পাকিস্তান অঞ্চলের জাত। গরম আবহাওয়ায় মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তির জন্য এরা খামারিদের কাছে প্রিয়। শাহীওয়াল জাতের গরু প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৫ লিটার দুধ দেয়। বাংলাদেশে এ জাতের গরু পালনের উপযোগিতা বেশি।
সিন্ধি (Red Sindhi)
সিন্ধি গরু দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি জনপ্রিয় জাত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্থানীয় আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ লিটার দুধ উৎপাদন করে।
দেশি ও সংকর জাত
বাংলাদেশের দেশি জাতের গরু তুলনামূলকভাবে কম দুধ দেয় (প্রতিদিন গড়ে ২–৫ লিটার)। তবে দেশি জাতের সঙ্গে ফ্রিজিয়ান বা জার্সি জাতের সংকরায়ণের মাধ্যমে উৎপাদন ৮–১৫ লিটার পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি খামারগুলোতে সংকর জাত উন্নয়নের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
খামারিদের করণীয়
-
গাভীকে পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য যেমন—ঘাস, ভুসি, খৈল, খনিজ ও ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে।
-
গরুর জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বাতাস চলাচল উপযোগী গোয়ালঘর নিশ্চিত করা জরুরি।
-
রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত টিকা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
-
গাভীকে বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে হবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশে ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহীওয়াল এবং দেশি-বিদেশি সংকর জাতের গরুই দুধ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এসব জাত সঠিকভাবে পালন করলে খামারিরা ভালো মুনাফা পেতে পারেন। একই সঙ্গে দেশের দুধ উৎপাদনও বাড়বে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে।