Swadhin News Logo
বৃহস্পতিবার , ২২ আগস্ট ২০২৪ | ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. আন্তর্জাতিক
  2. কৃষি ও প্রকৃতি
  3. ক্যাম্পাস
  4. খেলাধুলা
  5. চাকরি
  6. জাতীয়
  7. জোকস
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম
  11. নারী ও শিশু
  12. প্রবাস
  13. বই থেকে
  14. বিজনেস
  15. বিনোদন

অতি বন্যা কেন হয়?

প্রতিবেদক
Ahsan Habib
আগস্ট ২২, ২০২৪ ৬:২৫ অপরাহ্ণ
অতি বন্যা কেন হয়?

ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। ঋতু চক্রের পালা বদলে ছয়টি ঋতু গ্রীষ্ম,বর্ষা,শরৎ,হেমন্ত ,শীত,বসন্ত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে ভিন্নতা দিয়েছে। এই ধরনের বৈচিত্র্যতা সাধারণত বিশ্বের অন্য কোন দেশে দেখা যায় না। বছরের অধিকাংশ সময়ে যেমন প্রচন্ড গরম থাকে তেমনি বৃষ্টিপাত হয়। আমাদের দেশে ঋতু ভেদে বায়ুপ্রবাহ পরিবর্তিত হয়।
শীতকালে বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় , দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বর্ষাকালে প্রবাহিত হয়। সাধারণত সেপ্টেম্বারের শুরুর দিকে সূর্য দক্ষিণ দিকে সরে যেতে থাকে। নভেম্বার থেকে হিমালয়ের শুষ্ক ঠান্ডা বাতাস, দক্ষিণের দিকে প্রবাহিত হয়।যাকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু বলা হয়ে থাকে। বর্ষার ঋতুতে অর্থাৎ মে মাসের শেষের দিকে মৌসুমি বায়ু দিক পরিবর্তন করে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উত্তরের দিকে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প নিয়ে হিমালয় পর্বতমালার দিকে প্রবাহিত হয়। এই দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুপ্রবাহের কারণে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত দেখা যায়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের 70 থেকে 80 শতাংশ বৃষ্টিপাত বর্ষাকালে হয়ে থাকে। ভৌগলিক অবস্থান ভূপ্রকৃতি আবহাওয়া অথবা জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশের প্রায় সময় বন্যা দেখা যায়। এই দেশের উপর দিয়ে ৪০৫টি নদী বয়ে গেছে এবং প্রধান নদী গুলোর মূল শাখা বা উৎপত্তি স্থল দেশের বাহিরে। যখন একটি নদী একাধিক দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন তাকে ট্রান্সবাউন্ডারি রিভার বা আন্তঃসীমান্ত নদী বলে।
বাংলাদেশের নদী অববাহিকা গুলো হল গঙ্গা ,ব্রহ্মপুত্র,মেঘনা এগুলো বাংলাদেশ,ভারত,নেপাল,ভুটান ও চিনে বিস্তৃত রয়েছে। অববাহিকার ৯৩ শতাংশের অবস্থান বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বের পাহাড়ি এলাকা মধুপুর গর, লালমাই পাহাড় ও বরেন্দ্রভূমি ছাড়া অধিকাংশ জায়গায় প্লাবনভূমি এবং অর্ধেকের বেশি অংশের অবস্থান সমুদ্রের পৃষ্ঠ থেকে আট মিটার উচ্চতায়। দক্ষিণ-পশ্চিমে মৌসুমী বায়ু প্রবাহের ফলে বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি হতে থাকে,পরবর্তীতে এ পানির বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিচু এলাকাগুলো যেমন হাওর,ছোট নদী,বিল,ঝিল গুলো পানি দ্বারা পরিপূর্ণ হয়।যার ফলে দেশের নিচে এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে যায় ।পানি যখন নদীর তীর বা বাঁধ ভেঙে প্লাবন ভূমিতে ঢুকে মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, তখন সেই অবস্থাকে বন্যা বলে। পানি যে উচ্চতায় উঠলে ফসলের জমি,ঘরবাড়ি এবং রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়,সেই উচ্চতাকে ঐ এলাকার জন্য বিপদসীমা হিসেবে ধরা হয়।
বাংলাদেশের সাধারণত চার ধরনের বন্যা হয়ে থাকে।বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি ও নদীর পানি প্রবাহের উপর ভিত্তি করে বন্যার ধরন গুলো হয়ে থাকে,সাধারণত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রধান নদী গুলো ও তাদের শাখা বা উপনদী গুলোতে ধীরে ধীরে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তখন নদীর তীর বা বাদ উপচে বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো প্লাবিত হয় ফলে এই অঞ্চলগুলোতে বন্যা দেখা যায়।
আকস্মিক বন্যা দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব পাহাড়ি নদীগুলোতে আকস্মিক বন্যা হয়। এ বন্যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পানির দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং হ্রাস পায়। পাহাড়ি এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে নদীর পানি প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হয়।ফলে এ ধরনের বন্যা ফসলের ক্ষেত রাস্তাঘাট ও মানুষের বসত বাড়ির ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতি করে, অনেক সময় মানুষের জীবন হানিও ঘটায়। বৃষ্টিপাত জনিত বন্যা তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাত ও পানি নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনার কারণে এ ধরনের বন্যা হয়। ইদানিং শহর এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত জনিত বন্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
উপকূলীয় বন্যা বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্ন অঞ্চল ও মোহনায় জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় বন্যা হয়। বাংলাদেশে বন্যার জন্য বড় ভূমিকা পালন করে দেশের প্রধান তিনটি নদী অববাহিকা, জুন মাস থেকে ব্রহ্মপুত্র যমুনার পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্রুত বাড়তে থাকে এবং জুলাইয়ের প্রথমার্ধে ব্রহ্মপুত্র- যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে, তখন এ অববাহিকার জেলা কুড়িগ্রাম,জামালপুর,গাইবান্ধা এবং সিরাজগঞ্জ নিম্ন এলাকায় বন্যা হয়।
আবার জুলাইয়ের শেষে ও আগস্টের প্রথমার্ধে ব্রহ্মপুত্র যমুনার পানি আরো একবার বাড়ে এবং পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যা হয়। অন্যদিকে গঙ্গা অববাহিকায় জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং আগস্ট মাসে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। যার ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ,রাজশাহী,কুষ্টিয়া,পাবনা,রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলায় বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এপ্রিল-মে মাস থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মেঘনা অববাহিকা পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এ বন্যাকে আকস্মিক বন্যা অথবা আগাম বন্যা ও বলা হয়ে থাকে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল এলাকায় নদী সুরমা, কুশিয়ারা,মনু,খোয়াই,কংস ইত্যাদি নদীতে একাধিকবার বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।মেঘনা অববাহিকার বন্যার কারণে সিলেট,সুনামগঞ্জ,হবিগঞ্জ,মৌলভীবাজার,নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। ১৯৮৮ সালে দেশে ভয়াবহ বন্যা হয়,এই সময় প্রায় ৬১ শতাংশ এবং ১৯৯৮ সালের বন্যায় দেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়।

সর্বশেষ - Blog

error: Content is protected !!