ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার। এই নায়িকার বিরুদ্ধে নানান সময়ে অভিযোগ করেছিলেন সিনেমা অঙ্গনের অনেক তারকা। বিশেষ করে ২০২২ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে ছিলেন আলোচনা-সমালোচনায়। নির্বাচনে হেরেও পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসেন নিপুণ। দুই বছর পর ২০২৪-২৬ সালের নির্বাচন হয় গত ১৯ এপ্রিল। সেই নির্বাচনেও হেরে যান নিপুণ। অবশেষে নিজের পরাজয় মানতে পারেন তিনি। নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ পুরো কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন নিপুণ।
শোনা যায়, রাজনীতিবিদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (শেখ সেলিম) ছত্রছায়ায় নিপুণ হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। শেখ সেলিমের সঙ্গে গড়ে তোলেন অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক।
চিত্রনায়িকা নিপুণের ফেসবুকে ঢুকলেও দেখা যায়, শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সঙ্গে একাধিক ছবি রয়েছে নিপুণের। মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান কিংবা তাঁর নিজের পার্লার উদ্ভোধনের অনুষ্ঠানেও নিপুণের সঙ্গে দেখা যায় শেখ সেলিমকে।
একাধিক সূত্রে শোনা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অভিজাত এলাকা বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে নিপুণের প্রসাধনী ও লাইফ-স্টাইল কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ‘টিউলিপ নেইলস অ্যান্ড স্পা’ পার্লারটি তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন শেখ সেলিম।
গত কয়েক বছরে খুব বেশি সিনেমা না করলেও বিলাসবহুল জীবন যাপন করে চলেছেন নিপুণ। বিলাসবহুল গাড়ি, বিদেশে মেয়ের পড়াশোনা সবই নাকি শেখ সেলিমের বদৌলতে এমনটাও শোনা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, সরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে আইন মন্ত্রণালয়। সর্বত্রই ছিলো তার দৌড়। নিপুণ এমপি বা মন্ত্রী নয়। শেখ হাসিনার সরকারের কোনো দায়িত্বেও ছিলেন না। তারপরও তার এই প্রভাবের উৎস কী বা নেপথ্যে কে? বিষয়টি অনেকেরই জানলেও এতোদিন ভয়ে মুখ খোলার দুঃসাহস দেখাননি। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর নিপুণের অন্যায়ের ব্যাপারে অনেকেই সোচ্চার হয়েছেন।
এমন কী অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী করতে নির্বাচন কমিশনারদের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখান রাজনৈতিক নেতারা। নিপুণকে জয়ী করতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম।
শিল্পী সমিতির সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা একাধিক নির্বাচন কমিশনার নাম প্রকাশ না করে তাদের একজন বলেন, জীবনের হুমকি ছিল। যেকোনো সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে, এমন শঙ্কা ছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের একের পর এক ভয়ভীতি দেখিয়ে গালিগালাজ করা হয়। বলা হয় যে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। এমন লেভেল থেকে ফোন আসবে, ভাবতেই পারিনি। আমাদের একজনকে সেই সময় নিপুণকে জয়ী করাতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম সাহেব, তাঁর মতো লোক। এটা আমাদের অবাক করেছিল। ’
দেশের এক গণমাধ্যমে চিত্রনায়ক জায়দ খানও বলেছিলেন, নিপুণের পেছনে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আছেন। যার কারণে চাইলেও তাঁর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনোকিছু সরাসরি বলতে পারেন না। তাঁর মানে তিনিও সেই ‘অদৃশ্য শক্তি’ শেখ সেলিমের কথাই বলতে চেয়েছিলেন হয়তো।
চলচ্চিত্র অঙ্গনের আরও একজন জানান, নানান কারণে নিপুণ তাঁকে শেখ সেলিমের ভয় দেখিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন।
নিপুণ-শেখ সেলিমের অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন নিপুণের সাবেক স্বামী সাজ্জাদ হোসেন অপু। তিনি জানান, নিপুণ ছিলেন শেখ সেলিমের রক্ষিতা। শেখ সেলিমের অবৈধ সম্পর্কের জেরেই তাঁকে ছেড়ে চলে যায় নিপুণ।
শেখ হাসিনা সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন শেখ ফজলুর করিম সেলিম ওরফে শেখ সেলিম। শোনা যায়, শেখ সেলিমের ভালোবাসায়-আশীর্বাদে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন নিপুণ। সরকারি বেশ কয়েক দপ্তরে ছিল নিপুণের রাজত্ব।
এদিকে বিষয়গুলো নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি চিত্রনায়িকা নিপুণ। তাঁর মুঠোফোনে জানার চেষ্টা করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।