
ইরাক ভয়াবহ পানিসঙ্কটে পড়েছে। গত এক শতাব্দীর মধ্যে দেশটি সবচেয়ে মারাত্মক খরার কবলে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দ্রুত সরকারি উদ্যোগ না নিলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্কট আরও গভীর হবে। খবর আলজাজিরা’র।
১৯৩৩ সালের পর এবারই সবচেয়ে শুষ্ক বছর পার করছে ইরাক। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর পানির প্রবাহ কমে গেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। কারণ—কম বৃষ্টিপাত ও উজানে পানি আটকানো। এই দুই নদী পশ্চিম এশিয়া থেকে প্রবাহিত হয়ে পারস্য উপসাগরে গিয়ে মিশে।
বসরায় চরম দুর্দশা:
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বসরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। এটি ইরাকের প্রধান বন্দর ও তেল কেন্দ্র হলেও এখন মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন মানুষের বাস এখানে। পানি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বসরা এখন সবচেয়ে পানিসঙ্কটাপন্ন অঞ্চল।
অনেক পরিবার বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন ট্যাংকারের পানির ওপর নির্ভর করছে। স্থানীয় বাসিন্দা হাসান রায়কান প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে সামান্য পানি সংগ্রহ করেন। তিনি জানান, ভোরে উঠে কাজ ফেলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনেন তিনি। আশপাশের সাগরের পানি দূষিত, ব্যবহার করলে চর্মরোগ হয় বলেও জানান তিনি।
দূষণ ও লবণাক্ততার হুমকি:
পারস্য উপসাগর থেকে শাত আল-আরব নদী হয়ে লবণাক্ত পানি ধীরে ধীরে বসরার দিকে উঠে আসছে। ফলে বাড়ছে পানির লবণাক্ততা। অপরদিকে তেল দূষণ, কৃষিজ বর্জ্য ও নর্দমার পানি মিশে সমুদ্রের মান আরও খারাপ হচ্ছে।
অবস্থার উন্নয়নে আবুল খাসিব জেলায় চালু রয়েছে মিহায়লা ডেসালিনেশন প্ল্যান্ট। সেখানকার এক প্রকৌশলী সাদুন আববুদ জানান, প্রতিদিন ৭২ হাজার ঘনমিটার (১৯ মিলিয়ন গ্যালন) পানি পরিশোধন করে জেলার অর্ধেক বাসিন্দাকে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে শাত আল-আরব নদীতে দ্রবীভূত লবণের মাত্রা এখন ৪০ হাজার টিডিএস পর্যন্ত পৌঁছেছে।
জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি:
পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ আলা আল-বাদরানি জানান, লবণাক্ততার কারণে বসরা অঞ্চলে ২৬ থেকে ৩০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তৈরি হয়েছে অদ্ভুত এক পরিবেশ, যেখানে মিঠাপানি কিংবা লবণপানির কোনো প্রজাতিই বাঁচতে পারছে না। কৃষিকাজেও ব্যবহারযোগ্য নয় এই পানি।
রাজনৈতিক দুর্বলতা ও আঞ্চলিক চাপ:
চ্যাথাম হাউসের গবেষক হায়দার আল-শাকেরি জানান, খরা ও উষ্ণতা বিশ্বব্যাপী সমস্যা হলেও ইরাকের সঙ্কট অনেকটাই উজানের প্রতিবেশী তুরস্ক ও ইরানের পানি নিয়ন্ত্রণের কারণে। এছাড়া দেশীয় পর্যায়ে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থ পানি ব্যবস্থাপনাকে অকার্যকর করেছে। এতে প্রতিবেশীরা ইরাকের ক্ষতির বিনিময়ে নিজেদের সুবিধাজনক চুক্তি চাপিয়ে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সংস্কার জরুরি। জাতীয়ভাবে পানিসূত্র কূটনীতি পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ সংস্থা গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। প্রতিষ্ঠানটি নদীর পানি প্রবাহ তদারকি, বিভিন্ন প্রদেশ ও কুর্দিস্তান অঞ্চলের মধ্যে সমন্বয় এবং আন্তর্জাতিক আলোচনায় ইরাকের স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হবে।
/এমএমএইচ

















