সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা প্রতিনিধি:
রাতভর মেঘ বিস্ফোরণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে ১০ জেলায়। বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে তিস্তা, মহানন্দা, তোর্সা, জলঢাকাসহ বহু নদী। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুঁড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাসহ আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ভারী বৃষ্টির জেরে ধস নেমেছে পাহাড়ের একাধিক জায়গায়। বিচ্ছিন্ন সড়ক, বিদ্যুৎ ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা। সম্পূর্ণ বন্ধ ৩টি জাতীয় সড়ক। ফলে শিলিগুঁড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ দার্জিলিং ও সিকিমের। ভেঙে পড়েছে মিরিকের ঐতিহ্যবাহী দুধিয়া সেতু। বন্যা ও ভূমিধস কবলিত ৮ জেলায় পানিবন্দী লক্ষ লক্ষ পরিবার।
ইতোমধ্যে বৃষ্টি, ধস জনিত কারণে উত্তরবঙ্গে বহু মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সরকারি সূত্রে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ১৪ জন। প্রশাসন সূত্রে খবর মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী শনিবার রাতভর ভারী বর্ষণ হয় উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলে। অতিরিক্ত বৃষ্টির জেরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা ও জলঢাকা নদীর পানি। তিস্তা বাজার ও রবিঝোরায় কার্যত রাস্তায় উঠে এসেছে তিস্তা নদী। নদী ছাপিয়ে পানি উঠে গেছে লোকালয়ে। তিস্তা বাজার সংলগ্ন এলাকা পুরোপুরি জলমগ্ন।
পানিবন্দি রয়েছে একাধিক এলাকা। যান চলাচল সব বন্ধ রাখা হয়েছে আপাতত। মহানন্দা নদীর পাশে ভেসে গেছে বাঁধ। ধসের জেরে দার্জিলিং-সিকিম মূল রাস্তা ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ও শিলিগুঁড়ি-দার্জিলিং মূল রাস্তা ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ। বন্ধ দার্জিলিং-কালিম্পং এবং শিলিগুঁড়ি থেকে কালিম্পং সংযোগকারী সব রাস্তা। দুধিয়া ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় শিলিগুড়ির সঙ্গে মিরিকের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
মিরিকের সৌরেনি এলাকায় ধসে মৃত্যু ২ শিশুর। ৪ জন ধ্বসে চাপা পড়ে আটকে ছিল। পরে তাদের ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, ১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমতল এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের। পাশাপাশি দুর্গম ও ধস এলাকায় জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল (এনডিআরএফ) কাজ করছে। তবে অতি বৃষ্টিপাতের ব্যাহত হচ্ছে কাজ।
পাহাড়ে আচমকা সৃষ্ট দুর্যোগের জেরে দার্জিলিঙের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসনিক কর্তারা। টাইগার হিল, রক গার্ডেন-সহ সব পর্যটনস্থল বন্ধ করে দিয়েছে দার্জিলিং প্রশাসন। ধস সরিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা সেনা বাহিনীর ও জেলা প্রশাসনের।
এমন অবস্থায় বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। পর্যটক দের অনেকেরই ট্রেন ও বিমান ধরার কথা রয়েছে। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে তারা আদৌ সময়মতো রেলস্টেশনে বা বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ এই মুহূর্তে পর্যটকদের দার্জিলিং-এ না আসার পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে সমতলে শিলিগুঁড়ির পোড়াঝাড়ে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ভয়ানক রূপ নিয়েছে ফুলবাড়ির মহানন্দা ক্যানেল। নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন গলগলিয়া প্লাবিত হয়েছে। হাসিমারায় রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড বলছে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তোর্সা নদীর জলস্তর ১১৮ মিটার উপর দিয়ে বইছে। জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। অতি বন্যার সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতর।
ভারী বৃষ্টিপাত ও পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভুটান থেকে নেমে আসা পানির কারণে বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুঁড়ি, কোচবিহার জেলাও। জলপাই গুঁড়িতে একরাতে ১৭২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা এই বছর রেকর্ড বৃষ্টি। অন্যদিকে ভুটান থেকে নেমে আসা জলের তোড়ে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
পুলিশ, দুর্যোগ মোকাবিলা টিম এবং স্থানীয় প্রশাসন সকলে মিলে একযোগে কাজ করছে। ভুটান সরকারের তরফে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সতর্কবার্তা বার্তা পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আরজি জানানো হয়েছে।
/এটিএম