Swadhin News Logo
মঙ্গলবার , ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

ভারত কেন কাছে টানছে তালেবানকে?

প্রতিবেদক
Nirob
অক্টোবর ১৪, ২০২৫ ৫:৫২ অপরাহ্ণ
ভারত কেন কাছে টানছে তালেবানকে?

ভারত কেন কাছে টানছে তালেবানকে?

দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি প্রথমবারের মতো দিল্লি সফরে গিয়েছেন। এটি তালেবান সরকারের কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ভারতের প্রথম সরকারি সফর। এই সফরকে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘গেমচেঞ্জার’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘আলজাজিরা’ একটি এক্সপ্লেইনার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

যেখানে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার ও পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের পতনের পর তালেবান ক্ষমতায় ফিরে এলে ভারত তড়িঘড়ি করে দূতাবাস বন্ধ করে কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়। কিন্তু চার বছর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার তালেবান প্রতিনিধিদের লালগালিচা অভ্যর্থনা দিয়েছে।

নয়াদিল্লিতে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি ও তার দল

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় থাকা মুত্তাকি অস্থায়ী ভ্রমণ ছাড়পত্র নিয়ে ভারতে এসেছেন। তিনি ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর পরপরই জয়শঙ্কর ঘোষণা দেন—ভারত আবার কাবুলে তাদের দূতাবাস খুলবে।

জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভারত ও আফগানিস্তানের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা দুই দেশের উন্নয়ন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় সহায়ক হবে।‘

 অন্যদিকে মুত্তাকি বলেন, ভারত আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’। দুই দেশই নিয়মিত যোগাযোগ ও সহযোগিতা বজায় রাখবে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তা

তালেবান প্রতিনিধি দল ভারতের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আফগানিস্তানের খনি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এই বিনিয়োগ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও দৃঢ় করবে।

ভারত জানিয়েছে, আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্য প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার।

সফরের অংশ হিসেবে মুত্তাকি ভারতের উত্তর প্রদেশের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসাও পরিদর্শন করেছেন। সোমবার তিনি ঘোষণা দেন, কাবুল ও ভারতের শহরগুলোর মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে, যার মধ্যে অমৃতসরও রয়েছে।

কেন তালেবানকে কাছে টানছে ভারত

ঐতিহাসিকভাবে ভারত কখনোই তালেবানকে সমর্থন করেনি। বরং তারা ১৯৯০-এর দশকে তালেবানবিরোধী নর্দার্ন অ্যালায়েন্সকে সহায়তা করেছিল। সেই সময় পাকিস্তান তালেবানের প্রধান মিত্র ছিল। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী তালেবানকে সরিয়ে দিলে ভারত আবার কাবুলে দূতাবাস চালু করে।

তবে ২০২১ সালে তালেবানের দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় ফেরার পর ভারত আবার কূটনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করে। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক তীব্রভাবে খারাপ হয়ে পড়েছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগানিস্তান পাকিস্তানি তালেবান বা টিটিপিকে আশ্রয় দিচ্ছে—যারা পাকিস্তানে বহু হামলা চালিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে ভারত কৌশলগতভাবে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক বিশ্লেষক প্রভীন দোন্থি বলেন, ‘আগে তালেবানকে উপেক্ষা করার যে ভুল করেছিল ভারত, এবার সেই সুযোগ পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে চায় না দিল্লি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও বিনিয়োগের কারণে ভারত এখন বাস্তববাদী কূটনীতি বেছে নিয়েছে।’

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এখনকার তালেবান আগের মতো পুরোপুরি পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে নেই। তারা তুলনামূলকভাবে বেশি পরিপক্ব ও কূটনৈতিকভাবে দক্ষ। আর আফগানিস্তানের জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি ঐতিহাসিক সখ্যতা রয়েছে।’

পাকিস্তান-আফগান উত্তেজনায় ভারতের সুযোগ

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে গোলাগুলিতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। একই সময় মুতাক্কির দিল্লি সফর করায় বিষয়টি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়া পাকিস্তান হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে আরও টানাপোড়েন তৈরি করেছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পেহেলগামে হামলার নিন্দায় তালেবানের অবস্থানের জন্য ‘গভীর প্রশংসা’ জানিয়েছে।

তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, আফগানিস্তানের মাটিকে ভারতের বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।

তালেবানের জন্য কূটনৈতিক স্বীকৃতির লড়াই

দিল্লি সফর তালেবানের জন্য কূটনৈতিক মর্যাদা অর্জনের বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন পর্যন্ত কেবল রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় থাকা সত্ত্বেও ভারতের মতো বড় দেশের সঙ্গে বৈঠক তাদের জন্য বড় অর্জন।

মুত্তাকির সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা

তবে সফরটি ভারতে বিতর্কও তৈরি করেছে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মুত্তাকির প্রথম সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া হলে সমালোচনা হয়। পরদিন তালেবান প্রতিনিধিরা আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।

তালেবান প্রতিনিধিরা এখনো দিল্লিতে আফগান দূতাবাসের ভবন ব্যবহার করলেও, সেটি এখনো পূর্বতন সরকারের পতাকা উড়াচ্ছে। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।

তবে এই সফর তালেবানের জন্য ‘বড় কূটনৈতিক অর্জন’ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আফগানিস্তানের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সংখ্যালঘুরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

/এমএমএইচ

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক

আপনার জন্য নির্বাচিত