মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে মারাত্মক মাদক ফেন্টানিল প্রবাহের জন্য তিনি চীনকে দায়ী করেন। তবে বেইজিং জানায়, ফেন্টানিল সংকট একান্তই যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা। চীন এরইমধ্যে এ বিষয়ে ‘বড় অগ্রগতি’ অর্জন করেছে বলে দাবি করে।
সিএনএন‘র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন বলছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে যৌথভাবে কাজ করতে চায়। তবে ‘চাপ, হুমকি ও ব্ল্যাকমেইল’ বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানায় দেশটি।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত মাসে চীন আরও দুটি ফেন্টানিলের উপাদানকে নিষিদ্ধ তালিকায় যুক্ত করেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তাদের অবস্থান আরও শক্ত হলো। একই সময়, চীন নিতাজিন নামের আরেক ধরনের মাদক উপাদানের ওপরও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে।
চীনের জননিরাপত্তামন্ত্রী ওয়াং শিয়াওহং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিড পার্ডুকে বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে যৌথভাবে কাজ করতে চীন প্রস্তুত।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, চীন এখনও বেআইনি ফেন্টানিল উৎপাদনে ব্যবহৃত উপাদানের প্রধান উৎস। যদিও ২০১৯ সালে চীন ফেন্টানিলকে একটি সম্পূর্ণ মাদক শ্রেণি হিসেবে ঘোষণা করে। এতে করে সরাসরি চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল প্রবাহ অনেকটাই কমে আসে।
তবে অপরাধচক্র নতুন কৌশলে ফেন্টানিল তৈরি করছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ফেন্টানিলের কাঁচামাল মেক্সিকোর মাদকচক্রের কাছে বিক্রি করে। এরপর সেসব চক্র যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাঠায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন এ বিষয়ে অনেক পদক্ষেপ নিলেও আরও কিছু করণীয় রয়েছে। কারণ, এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল চীনের রাসায়নিক শিল্প খাত থেকেই আসছে।
চীন সরকার নিজেকে আন্তর্জাতিকভাবে ‘দায়িত্বশীল খেলোয়াড়’ হিসেবে তুলে ধরতে চায়। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী হলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা চাপ মেনে নিচ্ছে না।
চীন দাবি করছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ ছাড়াই নিজেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নতুন উপাদানগুলো নিষিদ্ধ করেছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক আরোপের কারণে চীন এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং হয়তো এর বিনিময়ে বাণিজ্য আলোচনায় সুবিধা পেতে চায়।
গত বছর একটি মার্কিন কংগ্রেস রিপোর্টে অভিযোগ তোলা হয়— চীন সরকার করছাড় দিয়ে বেআইনি মাদকের কাঁচামাল রপ্তানিকে উৎসাহ দিচ্ছে। চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সমস্যা তৈরি করা’ বলে অভিযুক্ত করে।
চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের দেশে মাদকের অপব্যবহার খুবই সীমিত। তাই তারা মনে করে, এই সমস্যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ— অর্থাৎ ‘চাহিদার সমস্যা’, সরবরাহের নয়।
চীনের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি মাদক বিশ্লেষণ কেন্দ্রের উপপরিচালক হুয়া জেনডং বলেন, ফেন্টানিল সমস্যার মূল সমাধান হলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের চাহিদা কমানো। কারণ ফেন্টানিল তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহারযোগ্য রাসায়নিকের সংখ্যা অনেক। সবগুলো একসঙ্গে নিষিদ্ধ করা প্রায় অসম্ভব।
তিনি বলেন, ‘এই খেলা মূলত বিড়াল-ইঁদুর খেলার মতো। অপরাধীরা নিয়ম বদলে নতুন রাসায়নিক দিয়ে একই মাদক তৈরি করতে পারে। তাই আমরা কেবল তাদের পেছনে ছুটতে পারি, আগেভাগে সব বন্ধ করা কঠিন।‘
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের নতুন পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা একটি শুরু মাত্র। এখন প্রয়োজন আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় পর্যায়ে এসব নির্দেশনার বাস্তব প্রয়োগ।
চীনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গত বছর ১,৪০০ টনের বেশি কাঁচামাল জব্দ করেছে এবং ১৫১টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে। তবে চীনের এক সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানায়, কেমিক্যাল চোরাচালানের পদ্ধতি দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এ বিষয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।
/এমএমএইচ