Swadhin News Logo
শনিবার , ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. আন্তর্জাতিক
  2. কৃষি ও প্রকৃতি
  3. ক্যাম্পাস
  4. খেলাধুলা
  5. চাকরি
  6. জাতীয়
  7. জোকস
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম
  11. নারী ও শিশু
  12. প্রবাস
  13. বই থেকে
  14. বিজনেস
  15. বিনোদন

মৃত্যুদণ্ড ঠেকাতে দরকার ৯০০ কোটি ডলার, কে এই ভিয়েতনামের নারী ব্যবসায়ী

প্রতিবেদক
Nirob
ডিসেম্বর ৭, ২০২৪ ৪:২৫ অপরাহ্ণ
মৃত্যুদণ্ড ঠেকাতে দরকার ৯০০ কোটি ডলার, কে এই ভিয়েতনামের নারী ব্যবসায়ী

ভিয়েতনামের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ীদের একজন ট্রুং মাই লান। এই নারী দামি আর বিলাসবহুল বাড়ি, হোটেল ও বাণিজ্যিক সম্পত্তির মালিক। শুধু দেশ নয়, বিদেশেও ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর সম্পত্তি। অভিযোগ রয়েছে, বিপুল এই সম্পত্তি নিজের আয়ত্তে নিতে তিনি দেশের একটি অন্যতম ব্যাংককে নিজের এটিএম বানিয়ে ফেলেছিলেন। অর্থাৎ তিনি ওই ব্যাংক থেকে খেয়ালখুশিমতো টাকা নিয়েছেন।

সিএনএন জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ৬৮ বছর বয়স্ক ট্রুং মাই লান একটি আপিলে হেরে গেছেন। তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল; তাঁর বিরুদ্ধেই ছিল ওই আপিল। বিশ্বের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যেসব বড় প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর একটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় ভিয়েতনামের আর্থিক খাত থেকে শত শত কোটি ডলার লোপাট করা হয়েছে।

হো চি মিন সিটির একটি আদালত ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার আত্মসাতের দায়ে গত এপ্রিলে ট্রুং মাই লানকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ অর্থ ভিয়েতনামের মোট অর্থনীতির ৩ শতাংশের মতো। যে দেশ বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছে, সেই ভিয়েতনামের ওপর আস্থা ধসিয়ে দেওয়ার জন্য এ ঘটনাই ছিল যথেষ্ঠ।

ট্রুং মাই লানের জন্য অবশ্য এখনো আশার সব বাতি নিভে যায়নি। টিমটিম করে জ্বলা সেই বাতির দাম ৯ বিলিয়ন বা ৯০০ কোটি ডলার। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ভিএনএক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনালের খবর অনুযায়ী, রায় দেওয়ার সময় বিচারক জানিয়েছিলেন যে তাঁর মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হবে, যদি তিনি আত্মসাৎ করা অর্থের তিন–চতুর্থাংশ পরিশোধ করেন।

এখন বড় প্রশ্ন হলো, জীবন বাঁচাতে তিনি ৯০০ কোটি ডলারের ব্যবস্থা করতে পারবেন কি না।

একটি সাধারণ চীনা–ভিয়েতনামি পরিবারে ১৯৫৬ সালে জন্ম ট্রুং মাই লানের। হো চি মিন শহরের প্রাচীনতম মার্কেটে তিনি মায়ের সঙ্গে প্রসাধনী বিক্রি করতেন। স্থানীয় ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিনি ধীরে ধীরে ছোট ব্যবসা গড়ে তোলেন। তবে তাঁর রমরমা অবস্থা শুরু হয় হংকংয়ের বিনিয়োগকারী এরিক চুয়ের সঙ্গে পরিচয়ের পর।

ট্রুং মাই লান ১৯৯২ সালে চুকে বিয়ে করেন। সে বছরই তিনি আবাসন কোম্পানি ভ্যান থিন ফ্যাট চালু করেন। ২০১১ সালের মধ্যে তিনি হো চিন মিন সিটির যথেষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। তবে তিনি নাম প্রচার করতে চাইতেন না। ওই বছর তিনি সায়গন জয়েন্ট কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একত্রীকরণের কাজে জড়িয়ে পড়েন। এটি সমন্বয় করেছিল দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সেই শুরু। ট্রুং মাই লানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি ধনী ও অভিজাত হওয়ার রাস্তায় উঠে যান। শেষ পরিণামে তিনি কুখ্যাতিও অর্জন করেন।

এক দশকের বেশি সময় পরে ভিয়েতনামের ফুলেফেঁপে ওঠা আবাসন খাতের বুদ্‌বুদ ধসে গেলে আর্থিক খাতে নানা রকম প্রতারণার ঘটনা বেরিয়ে আসতে শুরু করে। আইএসইএএস–ইউসফ ইসহাক ইনস্টিটিউটের ভিয়েতনাম স্টাডিজ কর্মসূচির ফেলো নগুয়েন খাক জেয়াং সিএনএনকে বলেন, কোভিড–১৯ মহামারির সময় ট্রুং মাই লানের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যবসাগুলো আর্থিকভাবে দারুন মার খায়।

শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের অক্টোবরে ট্রুং মাই লানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ওই গ্রেপ্তারের খবরে সায়গন কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়ার ধুম পড়ে। আমানতকারীদের সন্দেহ ছিল, ট্রুং মাই লানের কথিত আর্থিক অপরাধের সঙ্গে ভিয়েতনামের পঞ্চম বৃহত্তম এই ব্যাংকের সম্পর্ক থাকতে পারে।

কাগজে–কলমে ট্রুং মাই লান ছিলেন সায়গন কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫ শতাংশ শেয়ারে মালিক। বিদ্যমান আইনের বলে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ এই পরিমাণ শেয়ারের মালিক হতে পারেন। তবে আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, পরোক্ষভাবে তিনি ছিলেন ব্যাংকটির ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক। তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, এটি গোপন রাখতে তিনি ব্যাংক নিয়ন্ত্রক ও কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছিলেন।

ট্রুং মাই লান ও তাঁর সহযোগীরা হাজার হাজার ভুয়া কোম্পানি খুলে ব্যাংক থেকে ঋণ ও নগদ অর্থ বের করে নিয়েছেন বলে তদন্তকারীরা তাঁদের অভিযুক্ত করেন। এক দশকের বেশি সময় ধরে এ ঘটনা ঘটে। ব্যাংক থেকে বের করা মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৪ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

মালেয়েশিয়ার যে আর্থিক তহবিলের কেলেঙ্কারি নিয়ে সারা বিশ্বে হইচই হয়েছে, এর সঙ্গে ভিয়েতনামের ঘটনার তুলনা করা যেতে পারে। মালয়েশিয়ার ওয়ানএমবিডি তহবিল থেকে লুটপাট করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৫০ কোটি ডলার। তারপরও এটিকে বিশ্বের অন্যতম বড় আর্থিক অপরাধের ঘটনা বলে চিহ্নিত করা হয়।

এমনকি ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা স্যাম ব্যাঙ্কম্যান–ফিডের ৮০০ কোটি ডলারের জালিয়াতিও ট্রুং মাই লানের করা অর্থ আত্মসাতের তুলনায় সামান্য মনে হয়।

ট্রুং মাই লানের জালিয়াতির ঘটনা এত বড় যে এর জন্য দুটি আলাদা বিচারের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছিল ১২ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের ঘটনা, যার জন্য তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৮৫ জনের বিচার হয়, যাঁদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের সাবেক কর্মকর্তা এবং সায়গন কমার্শিয়াল ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক নির্বাহী।

গত অক্টোবর মাসে আলাদা একটি মামলায় ট্রুং মাই লানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি প্রতারণা, অর্থ পাচার ও অবৈধভাবে সীমান্তের বাইরে অর্থ নেওয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ভিএনএক্সেপ্রেস ইন্টারন্যাশনালের খবর অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে ২৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার তছরুপ করা হয়েছিল।

ট্রুং মাই লান অনেকবার ক্ষমা চেয়েছেন। অক্টোবরের বিচারের সময় তিনি আদালতকে বলেন, তিনি কখনোই জালিয়াতি করতে চাননি। তবে তিনি দায়দায়িত্ব কাঁধে নিতে প্রস্তুত আছেন। তিনি বলেন, ‘আমি একে আমার কপাল বলে মেনে নিচ্ছি।’

ভিয়েতনামে কর্তৃত্ববাদী শাসনের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হয়। এমন একটি দেশে এ মাত্রার প্রতারণার ঘটনা সবাইকে বেশ বড় নাড়া দিয়েছে। প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশ শাসন করছে কমিউনিস্ট পার্টি, ১৯৭৫ সালের ভিয়েতনাম যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর থেকেই। দীর্ঘস্থায়িত্ব, জাতীয় ঐক্য ও দলের প্রতি আনুগত্য—এই হলো ক্ষমতাসীন দলের মূলমন্ত্র।

কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নগুয়েন ফু ট্রং ২০১৬ সালে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেন। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জ্বলন্ত উনুন’। এ অভিযানের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারাও। ভিয়েতনামে ব্যবসা ও দুর্নীতি একে অপরকে জড়িয়ে রয়েছে। ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২৩ সালের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভিয়েতনামের অবস্থান ছিল ১৮০টি দেশের মধ্যে ৮৩তম।

ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিভাগের অধ্যাপক জ্যাকারি আবুজা সিএনএনকে বলেন, ট্রুং মাই লানের আর্থিক অপরাধ এটাই দেখিয়েছে যে একটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘ভিয়েতনাম দেশটি শাসিত হয় রাষ্ট্রের মাধ্যমে। লান যা করেছেন, তা তিনি করতে পারতেন না, যদি না কর্মকর্তারা এ ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে যোগসাজশ না করতেন।’

সর্বশেষ - চাকরি

error: Content is protected !!